প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ

মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় এক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। ওই স্কুলেরই এক শিক্ষিকা এ অভিযোগ করেছেন। এরই মধ্যে তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এদিকে প্রধান শিক্ষক রনধীর দাশের অভিযোগ, ওই শিক্ষিকার স্বামী একাধিক মানুষ নিয়ে এসে তাঁকে মারধর করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি ওই শিক্ষিকার স্বামীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে ওই শিক্ষিকা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন এবং অভিযোগপত্রটি দেখান। তিনিই জানান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পাশাপাশি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালে অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগে ওই শিক্ষিকা জানান, তাঁর সাথে অনৈতিকভাবে মেলামেশার জন্য কথার ফাঁকে হাসির স্থলে প্রস্তাব দিতেন প্রধান শিক্ষক রনধীর দাস। প্রায় সময় কাজের কথা বলে তাঁর অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে অযথা তাঁর গায়ে হাত দিয়ে কথা বলতেন। এসব বিষয়ে আপত্তি করলে প্রধান শিক্ষক অন্য কোথাও বদলি করে দেওয়ার হুমকি দেন।
ওই শিক্ষিকা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, প্রধান শিক্ষক তাঁর স্ত্রী ও সন্তান অন্যত্র রেখে বিদ্যালয়ের পাশের এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। ভাড়া বাসায় তাকে (শিক্ষিকা) একা যাওয়ার জন্য প্রায়ই প্রস্তাব দিতেন। ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রধান শিক্ষক আরো ক্ষিপ্ত হন। স্কুল শিক্ষিকার বাড়ি ও তার স্বামীর বাড়ি স্কুলের পাশের এলাকায় হওয়ায় মান সম্মান হারানোর ভয়ে কাউকে প্রথমত কিছু বলেননি। প্রধান শিক্ষকের যৌন হয়রানির মাত্রা বাড়তে থাকলে শিক্ষিকা বাধ্য হয়ে স্কুল কমিটির সভাপতি, সহকর্মী অপর সহকারী শিক্ষক ও এলাকার কয়েকজনকে বিষয়টি জানান। বিষয়টি সমাধানের জন্য গত ১৩ মে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে তাঁরা আলোচনায় গেলে কোনো উত্তর পাননি।
স্কুল শিক্ষিকা জানান, গত ১৬ মে প্রধান শিক্ষক তাঁকে নিজ কক্ষে ডাকেন। ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে প্রধান শিক্ষক কক্ষের দরজা আটকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ওই সময় তিনি (শিক্ষিকা) জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান। পরে তাকে স্কুলের পাশে একটি বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক রনধীর দাশ যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি অভিযোগ করেন ওই শিক্ষিকার স্বামী দলবল নিয়ে এসে তাঁকে মারধর করে। আহত অবস্থায় তিনি মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে শিক্ষক নেতারা রনধীর দাশের পক্ষে গত ১৮ মে মানববন্ধন পালন শেষে হামলাকারীকে গ্রেপ্তারের আলটিমেটাম দেন। রনধীর দাশ থানায় ওই শিক্ষিকার স্বামীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, মারধরের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকাও লুট করে তারা।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল আলীম বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকা উভয়ই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।