পরীক্ষার হলে ঢুকতে বাধা, শিক্ষিকাকে ছাত্রলীগের ছুরিকাঘাত

এইচএসসি পরীক্ষা চলার সময় হলে বহিরাগতকে ঢুকতে বাধা দেওয়ায় ময়মনসিংহের গফরগাঁও সরকারি কলেজের এক সহকারী অধ্যাপককে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। হামলাকারী দুই যুবক স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাকিয়া ফেরদৌসীকে ছুরিকাঘাত করা হয়। কলেজ ক্যাম্পাসের ডরমেটরির সামনে এই ঘটনা ঘটে। আহত শিক্ষিকা বাদী হয়ে রাতেই গফরগাঁও থানায় মামলা করেছেন। রাতেই ওই দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।
ছাত্রলীগের ওই দুজন হলেন দেলোয়ার হোসেন টিপু। তিনি গফরগাঁও পৌর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। অন্যজনের নাম হৃদয়। তিনি স্থানীয় ছাত্রলীগের সদস্য। গফরগাঁও পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল হোসেন সুমন এ দুজনের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।
কাজী জাকিয়া ফেরদৌসী জানান, গতকাল এইচএসসি পরীক্ষার সময় গফরগাঁও সরকারি কলেজ কেন্দ্রে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে টিপু ও হৃদয় নামে দুই যুবকসহ আরো দুই-তিনজন বহিরাগত পরীক্ষার হলে ঢুকতে গেলে তিনি বাধা দেন। তিনি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আমীর হোসেনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে হলে ঢোকার জন্য বলেন। এতে ওই যুবকদের সঙ্গে তাঁর বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় তাঁর সঙ্গে কেন্দ্রের শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।
বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে অধ্যক্ষ কক্ষ থেকে বেরিয়ে এলে ওই যুবকরা বেরিয়ে যায়। বের হওয়ার সময় ওই বহিরাগতরা শিক্ষিকাকে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন।
কাজী জাকিয়া ফেরদৌসী বলেন, “রাত ৯টায় স্থানীয় বাণিজ্য মেলা থেকে আমি ফিরে আসছিলাম। কলেজ ডরমেটরির সামনে পৌঁছালে এক যুবক আমার পথ রোধ করে দাঁড়ায়। যুবকটি বারবার জিজ্ঞেস করছিল আমি তাঁকে চিনতে পারছি কি না। আমি না বলাতে ওই যুবক বলে, ‘আমার চোখের দিকে তাকান, তাকালেই চিনবেন’। আমি ভালো করে দেখি ওই যুবক সকালে আমার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা করেছে। পরে জেনেছি ওর নাম টিপু।”
“পরে ওই যুবকসহ আরো এক যুবক এসে আমাকে ঘিরে ধরে। ওই যুবক ছুরি বের করে বলে, ‘সকালে আমাকে চোখ রাঙিয়েছেন এখন আমি আপনার চোখ তুলে ফেলব।’ তখন দেখি আশপাশের গলি থেকে আরো কয়েকজন যুবক বেরিয়ে আমাকে ঘিরে ফেলে। তখন আমি বলি, তোমরা ভেতরে আসো। স্যার আছেন (অধ্যক্ষ), কথা বলি।”
কিন্তু টিপু উত্তেজিত হয়ে বলে, “‘তোকে এখানেই ফেলব।’ এই বলে আরেকটি ছুরি বের করে। তখন আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকে যাই। এরপর টিপুসহ আরেক যুবক আমার হাত ধরে বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য টানতে থাকে। তখন আমার জামা ছিঁড়ে যায়। তখন ওই যুবকদের একজন বলে, ‘শোয়াই ফেল, এখানেই ফেলব। যা নিয়ে আসছিস বের কর।’ এই বলে তারা ছুরি বের করে। তখন আমি চিৎকার করে তাদের ধাক্কা মেরে ভেতরে ঢুকে যাই। এ সময় ছুরিকাঘাতে আমার বাম হাত কেটে যায়।”
এরপর ওই শিক্ষিকার এক সহকর্মী দৌড়ে আসেন। দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আমীর হোসেনও। এ সময় টিপুসহ দুর্বত্তরা মোটরসাইকেলে করে চলে যায় বলে জানিয়েছেন ওই শিক্ষিকা।
গফরগাঁও সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আমীর হোসেন জানান, রাতে বাণিজ্য মেলা থেকে ফেরার পথে শিক্ষিকা জাকিয়া ফেরদৌসীকে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে কলেজের অন্য শিক্ষক ও কর্মচারীরা তাঁকে উদ্ধার করে গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়।
অধ্যক্ষ বলেন, সকালে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বিনা অনুমতিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে যে বহিরাগতরা কলেজে ঢুকেছিল, তারাই রাতে শিক্ষিকার ওপর হামলা চালিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মাহবুব আলমকে ফোন করা হলে প্রথমে উপপরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার পরিচয়ধারী একজন ফোন ধরেন। তিনি জানান, ওসি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। পরে ওসি নিজেই আবার ফোন করেন। এ সময় তিনি জানান, তিনি আসলে অসুস্থ নন।
শিক্ষিকাকে ছুরিকাঘাতের বিষয়ে ওসি জানান, রাতেই এ ব্যাপারে একটি মামলা হয়েছে। রাত দেড়টার দিকে অভিযুক্ত হৃদয় ও টিপুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপর সকালে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
তবে চেষ্টা করেও এ ব্যাপারে স্থানীয় ছাত্রলীগের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।