আতিয়া মহলের দুই জঙ্গির লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন

সিলেটের শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলে নিহত দুই জঙ্গির লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন নারী ও একজন পুরুষ।
আজ শনিবার বেলা ৩টার দিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের হজরত মানিকপীর (রহ.)-এর কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হয়।
নিহত জঙ্গিদের একজন মর্জিনা বেগম ও অপরজন তাঁর স্বামী কাওসার বলে ধারণা করেছিল পুলিশ। এই পরিচয়ে তাঁরা সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি পাঠানপাড়ার আতিয়া মহলে বাসা ভাড়া নেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা তাঁদের দাফনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় বেওয়ারিশ হিসেবে লাশ পুলিশের পক্ষ থেকে দাফন করা হয়েছে। আর আতিয়া মহলের ভেতরে এখনো দুটি লাশ রয়ে গেছে। বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের অভিযানের পর পুলিশের অপরাধ বিভাগ (সিআইডি) আলামত সংগ্রহ করবে। এরপর সেগুলো বের করে আনা হবে।
লাশ দুটি দাফন করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের হজরত মানিক পীর কবরস্থানে নিয়োজিত মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আহসান কবির। তিনি জানান, ‘পুলিশ দুটি লাশ দাফনের জন্য আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। তারা জানিয়েছে, লাশগুলো দক্ষিণ সুরমার আতিয়া মহলে নিহত দুই জঙ্গির। তাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী। আমরা লাশগুলো দাফন করেছি।’
গত ২৯ মার্চ বুধবার জঙ্গি মর্জিনার লাশ শনাক্ত করতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়ন থেকে নিয়ে আসা হয় বাবা নুরুল ইসলাম ও বড় ভাই জিয়াবুল হককে। কিন্তু বাড়ি ভাড়ার সময় দেওয়া ছবি ও মৃতদেহের ছবি দেখালে তাঁরা তা শনাক্ত করতে পারেননি। নুরুল ইসলাম চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পরিচালিত অভিযানে নিহত জঙ্গি জুবাইরা ইয়াসমিনের বাবা। প্রথম থেকে ধারণা করা হচ্ছে জুবাইরার বোন মর্জিনা। পরে নুরুল ইসলাম ও জিয়াবুল হকের ডিএনএ নমুনা রাখা হয়।
৩০ মার্চ বৃহস্পতিবার হাসপাতালের মর্গে থাকা পুরুষ জঙ্গির লাশ শনাক্ত করতে রাজশাহী থেকে নিয়ে আসা হয় জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির নেতা মঈনুল ইসলাম মুসার স্বজনদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত চার জঙ্গির মধ্যে নব্য জেএমবির নেতা মঈনুল ইসলাম মুসা রয়েছেন। তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হতে স্বজনদের রাজশাহী থেকে সিলেটে আনা হয়। কিন্তু সুইসাইডাল ভেস্ট (আত্মঘাতী কোমরবন্ধ) বিস্ফোরণের কারণে হাসপাতালে থাকা লাশ ও আতিয়া মহলের ভেতরে থাকা অন্য দুটি লাশ বের করে আনতে না পারায় শনাক্ত করতে পারেনি মুসার পরিবার। পরে তাঁদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হয়। মরদেহ শনাক্তের জন্য এসেছিলেন মুসার মা সুফিয়া বেগম, সৎভাই খাইরুল ইসলাম ও বোন কামরুন নাহার।
২৩ মার্চ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানার বিষয়টি টের পেয়ে আতিয়া মহলের চারদিকে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে ২৫ মার্চ শনিবার সকাল থেকে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ পরিচালিত হয়। সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেনের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানের শুরুতে উদ্ধার করা হয় ওই ভবনে অবরুদ্ধ থাকা ৭৮ জনকে। ওইদিন রাতে আতিয়া মহলের অদূরে এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় সাতজন নিহত ও আহত হন অর্ধশত। ২৮ মার্চ সন্ধ্যায় শেষ হয় ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’। অভিযানে নিহত চার জঙ্গির মধ্যে এখনো ভেতরে পড়ে আছে দুই জঙ্গির লাশ।
গত ২৭ মার্চ আতিয়া মহল থেকে দুই জঙ্গির লাশ বের করে পুলিশে হস্তান্তর করে সেনাবাহিনী। এর পর থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মরচুয়ারিতে ছিল লাশ দুটি। এর মধ্যে তাঁদের ময়নাতদন্ত ও ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করা হয়।