চতুর্থ দিনের ব্রিফিংয়ে যা বললো সেনাবাহিনী

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ী এলাকার ‘জঙ্গি আস্তানা’ ‘আতিয়া মহলে’ অভিযান শুরুর পর থেকেই সন্ধ্যায় নিয়মিত ব্রিফিং দিয়ে আসছে সেনাবাহিনী। এ থেকে অভিযান সম্পর্কে জনগণ তথ্য পাচ্ছে। এ অভিযানের কিছু ভিডিও এবং স্থিরচিত্রও আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) ওয়েবসাইডে আপলোড করা হয়েছে।
তারই ধারাবাহিকতায় আজ সোমবারও ব্রিফ করেন সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান।
গত বৃহস্পতিবার শেষ রাতের দিকে ‘আতিয়া মহল’ ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুক্রবার রাতে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও শনিবার তারা ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, গতকাল রোববার ভবনে থাকা দুই জঙ্গি নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার নিহত হন আরও দুইজন। গত শনিবার সেনাবাহিনীর পক্ষে প্রথম ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। অভিযানের তথ্য তুলে ধরেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান।
আজ সন্ধ্যায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান যে বক্তব্য দেন তা এখানে তুলে ধরা হলো-
“আমাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া খুব সুন্দর ও সফলভাবে অভিযানটা চলছে। দিনের শেষ দিকে ‘আতিয়া মহলের’ নিচতলা থেকে চারটা ডেডবডি পেয়েছি। আমাদের কাছে আগেই যে গোয়েন্দা তথ্য, বিশেষ করে পুলিশের গোয়েন্দা তথ্য যেটা পেয়েছিলাম তাতে তথ্য ছিল যে চারজন জঙ্গি এখানে আছে। এটাও ছিল যে তিনজন পুরুষ ও একজন মহিলা। যে ডেডবডিগুলো পেয়েছি তাঁদের তিনজন পুরুষ ও একজন মহিলা। তবে আমরা দুটো ডেডবডি বের করে নিয়ে আসতে পেরেছি। দুটো ডেডবডি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি দুটো ডেডবডির মধ্যে এখনো সুইসাইডাল ভেস্ট লাগানো। যে অবস্থায় আছে, তাদের সেখান থেকে বের করা ঝুঁকিপূর্ণ। ডেডবডিগুলো কীভাবে বের করব সে পরিকল্পনা আমরা করছি। সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।
তবে সার্বিক যে অবস্থা দেখলাম, যে একটা রুমে একটা ডেডবডি পড়ে আছে, তার পাশেই ছড়ানো ছিটানো চার-পাঁচটা বিভিন্ন ধরনের এক্সপ্লোসিভ লাগানো আছে। পুরো বিল্ডিংটায় যে পরিমাণ এক্সপ্লোসিভ আছে এগুলো যদি ফাটে বা এক্সপ্লোসন হয়তো বিল্ডিংয়ের অংশবিশেষ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। পুরো বিল্ডিংটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। সেজন্যই খুব সতর্কতার সঙ্গে এগোতে হচ্ছে। যে চারজন এখানে ছিল তারা মোটামুটি বেশ ওয়েল ট্রেইনড। এবং তাদের খুঁজে বের করে নিষ্ক্রিয় করা হলো বা হত্যা করা এটা কিন্তু আমাদের জন্য বিশেষ করে সেনাবাহিনীর জন্য বিশাল বড় সফলতা আমি বলতে পারি।
আমাদের অপারেশন এখনো চলমান আছে। এ অপারেশন হয়তো আরো কিছু সময় লাগতে পারে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ অনুযায়ী আমরা বাকিটুকু এগিয়ে যাব। অপারেশন আমাদের তরফ থেকে সমাপ্তি ঘোষণা করা হলে ক্রাইম সিন হিসেবে পুলিশের কাছে পুরো জায়গাটা আমরা হস্তান্তর করব। তারা তাদের নিয়ম অনুযায়ী বাকি কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
প্রশ্নোত্তর পর্ব
প্রশ্ন : নিহতদের মধ্যে কোনো শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি আছে কি না…
উত্তর : সেটা এখনই আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। সেই আইডেন্টিফিকেশন প্রসেস চলবে। পুলিশ, র্যাব তারা তাদের নমুনা সংগ্রহ করবে। তারপর নিশ্চিত করে কে কী ছিল তা বলতে পারবে।
প্রশ্ন : জীবিত কেউ আছে কি-না…
উত্তর : আমরা চারজনের কথা জানতাম। চারটা ডেডবডি আমরা পেয়েছি। তিনজন পুরুষ, একজন মহিলা। যতটুকু ধারণা হচ্ছে, এখানে জীবিত আর কেউ নেই। তবে হঠাৎ করে কেউ থেকেও যেতে পারে সেটা বলা ডিফিকাল্ট।
প্রশ্ন : এ চারজনকে নির্মূলের মধ্য দিয়ে অভিযান সফল হলো বলে মনে করেন কি?
উত্তর : অভিযানের সমাপ্তি আমি এখনো ঘোষণা করছি না। এটার একটা প্রক্রিয়া আছে সেটার মাধ্যমে আমরা শেষ করব।
প্রশ্ন : চারজন আপনাদের অভিযানেই তো নির্মূল হয়েছে?
উত্তর : সেটা তো অবশ্যই। বললাম তো সুইসাইডাল ভেস্ট এখনো গায়ের মধ্যে লাগানো আছে। আমাদের অভিযানেই তো তারা নিহত হয়েছে।
প্রশ্ন : ভবনের ওপর কি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আছে…?
উত্তর : এটা শুরু থেকেই ছিল। এখনো আছে। আজ আমরা ভেতর থেকে ডেডবডি বের করে নিয়ে আসছি। এটা কখনো আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। একটা কেউ তো এখান থেকে বের হতে পারেনি।
প্রশ্ন : ওরা কী ধরনের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে?
উত্তর : সম্ভবত সুইসাইডাল ভেস্ট এক্সপ্লোড করেছে। তার একটা বড় শব্দ হয়েছে আজ। যে পরিমাণ ফায়ারিং হচ্ছে, গ্রেনেড লঞ্চ করা হচ্ছে, ভেতরে বাসিন্দাদের কাথা বালিশ বিভিন্ন কিছু ছিল, আমরা টিয়ার গ্যাস ফায়ার করেছি। কোনো ভাবে এখানে আগুন লাগতেই পারে। তবে আগুন লাগলে সেটা বিপজ্জনক হতে পারত। সঙ্গে সঙ্গে সেটাকে আমরা নিভিয়েছি।
প্রশ্ন : বিস্ফোরকের শক্তিমত্তা সম্পর্কে ধারণা…
উত্তর : শক্তিমত্তা সম্পর্কে একটা ধারণা বলি। যেমন, কলাপসিবল গেটের সামনে বালতির মধ্যে এক্সপ্লোসিভ ছিল, ওটা যখন ডেটরেট করেছে কলাপসিবল গেটটা পুরোটা উড়ে এসে পাশের বিল্ডিংয়ে এসে পড়েছে। আমাদের ওখানে তিন চারজন সদস্য ছিল তারা ছিটকে গেছে। পুরো বিল্ডিং কেঁপে ওঠে। এ রকম এক্সপ্লোসিভ তো ভেতরে আরো থাকতে পারে। আমাদের কোনো সদস্য আহত হয়নি। আমাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
প্রশ্ন : তাদের সর্বশেষ প্রতিরোধ…
উত্তর : তারা এক্সপ্লোসিভ ফুটিয়েছে, গ্রেনেড লক করেছে, ফায়ার করেছে। তাদের যা ছিল সেগুলো তারা ব্যবহার করেছে।