খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ইতি চাকমার হত্যকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে কয়েকটি নারী সংগঠন।

আজ বুধবার সকালে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, নারী আত্মরক্ষা কমিটি, সাজেক নারী সমাজ এবং ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি যৌথভাবে এ কর্মসূচি পালন করে।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন ইতি চাকমার মা ভদ্রপতি চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরুপা চাকমা, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি কাজলী ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অনিল চাকমা প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ইতি চাকমা হত্যাকে তাঁরা বিচ্ছিন্ন, আলাদা বা সর্বশেষ কোনো দুঃখজনক মর্মান্তিক ঘটনা বলে মনে করেন না। কারণ তাঁরা ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের ঘটনা দেখছেন। তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বারবার এও প্রত্যক্ষ করছেন যে পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। কিন্তু হত্যা-নির্যাতনে জড়িতদের কোনো যথাযথ বিচার হয় না।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ইতি চাকমা হত্যার ঘটনা তদন্তের উছিলায় তার ঘনিষ্ঠ সহপাঠী ও বন্ধুদের আটক-জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। যা পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা মাত্র।

বক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ইতি চাকমা খুনের দুই সপ্তাহের বেশি সময় পার হলেও প্রকৃত অপরাধীদের এখানো আটক করা হয়নি। বক্তারা ইতি চাকমা হত্যার রহস্য উদঘাটন করে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এ ছাড়া আগামী ২৯ মার্চ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কালো ব্যাজ ধারণসহ এক ঘণ্টা ক্লাস বর্জন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

স্মারকলিপিতে তিন দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- ১. ইতি চাকমার হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচার, হত্যার প্রকৃত রহস্য উন্মোচন করা, জিজ্ঞাসাবাদের নামে অহেতুক আটক ও হয়রানি বন্ধ করা; ২. সভা সমাবেশ করার সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার প্রদান করা, গ্রেপ্তার ধরপাকড় তল্লাশি বন্ধ করা, ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা তুলে নেওয়া এবং ৩. পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে সরকারের সার্কুলার গোপনে বা প্রকাশ্যে জনগণের সম্মতি ব্যতীত জারি বন্ধ করা।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় ওই নারী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা স্বনির্ভর, মধুপুর, মিলনপুর, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আসে। পরে সেখানে তারা অবস্থান ধর্মঘট পালন করে।

কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কৃষি গবেষণা, জিরো মাইল, দেওয়ান পাড়া, দীঘিনালাসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে বাধা প্রদানের চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে।