৬ ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার পরবর্তী সাক্ষ্য ২৬ ফেব্রুয়ারি

সাভারের আমিনবাজারে ছয় ছাত্রকে ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আজ সোমবার ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রফিকুল ইসলাম এ দিন ধার্য করেন। এ মামলায় কোনো সাক্ষী না আসায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেসমিন জাহান মিতু সময়ের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে নতুন দিন ধার্য করেন।
এ মামলায় এ পর্যন্ত ৪৬ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ২০১৩ সালের ৮ জুলাই এ মামলার অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
এ মামলায় ২০১৩ সালের ১২ জানুয়ারি ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কাজী শহিদুল ইসলামের আদালতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক শরিফ উদ্দিন আহমেদ ৬০ আসমিকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রের ৬০ আসামি হলেন ডাকাতি মামলার বাদী আবদুল মালেক, সাঈদ মেম্বার, আবদুর রশিদ, ইসমাইল হোসেন রেফু, নিহর ওরফে জমশের আলী, মীর হোসেন, মজিবর রহমান, কবির হোসেন, আনোয়ার হোসেন, রজুর আলী সোহাগ, আলম, রানা, আবদুল হালিম, আসলাম মিয়া, শাহীন আহমেদ, ফরিদ খান, রাজীব হোসেন, হাতকাটা রহিম, মো. ওয়াসিম, সেলিম মোল্লা, সানোয়ার হোসেন, শামসুল হক ওরফে শামচু মেম্বার, রাশেদ, সাইফুল, সাত্তার, সেলিম, মনির, ছাব্বির আহম্মেদ, আলমগীর, আনোয়ার হোসেন আনু, মোবারক হোসেন, অখিল খন্দকার, বশির, রুবেল, নূর ইসলাম, আনিস, সালেহ আহমেদ, শাহাদাত হোসেন রুবেল, টুটুল, অখিল, মাসুদ, নিজামউদ্দিন, মোখলেছ, কালাম, আফজাল, বাদশা মিয়া, তোতন, সাইফুল, রহিম, শাহজাহান, সুলতান, সোহাগ, লেমন, সায়মন, এনায়েত, হয়দার, খালেদ, ইমান আলী, দুলাল ও আলম।
এ মামলায় ১৪ জন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সাক্ষী করা হয়েছিল ৯২ জনকে।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ১৮ জুলাই শবেবরাতের রাতে ভোরে আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামসংলগ্ন কেবলারচরে ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয় মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের তিন শিক্ষার্থীসহ ছয় কলেজছাত্রকে।
নিহতরা হলেন, ‘এ’ লেভেলের ছাত্র শামস রহিম শামাম (১৮), মিরপুর বাঙলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান পলাশ (২০), একই কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইব্রাহিম খলিল (২১) ও উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র কামরুজ্জামান কান্ত (১৬), তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র টিপু সুলতান (১৯) ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সিতাব জাবির মুনিব (২০)।
নিহতদের সঙ্গে থাকা আরেক বন্ধু আল-আমিন গুরুতর আহত অবস্থায় প্রাণে বেঁচে যান।
ঘটনার পর কথিত ডাকাতির অভিযোগে বেঁচে যাওয়া আল-আমিনসহ নিহতদের বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগে একটি মামলা করেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী আবদুল মালেক (বর্তমানে এ মামলার আসামি) এবং পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করে।
এ হত্যার ঘটনায় সাভার থানার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হলে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। একই সঙ্গে থানার পুলিশের ভূমিকা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি করে পুলিশ সদর দপ্তর। ওই কমিটি তথ্যানুসন্ধানের পর মত প্রকাশ করে, ওই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা ছিল ‘অপেশাদার ও দায়িত্বহীন।’
অন্যদিকে ওই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার সংগঠন ন্যাশনাল ফোরাম ফর প্রোটেকশন অব হিউম্যান রাইটসের মহাসচিব আইনজীবী তাজুল ইসলাম ২০১২ সালের জুলাইয়ে একটি রিট আবেদন করেন। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। চূড়ান্ত শুনানির পর হাইকোর্ট বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়।
বিচার বিভাগীয় তদন্তে নিহতরা ডাকাত নয় বলে প্রতিবেদন দেওয়া হলে সাভার থানার পুলিশ থেকে তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি।
কিন্তু সিআইডির তদন্ত সন্তোষজনক না হওয়ায় হাইকোর্ট ২০১২ সালের ৭ আগস্ট র্যাবের কাছে তদন্তভার হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়। র্যাবকে চার মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
র্যাবের তদন্তের আগে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. সিরাজুল হক মামলাটির তদন্ত করে আসছিলেন। তারও আগে সাভার থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মতিয়ার রহমান মিয়া মামলাটির তদন্ত করেছিলেন।