জরিমানার পর রাজশাহীর সব ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকে ধর্মঘট

র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার পর রাজশাহীতে দ্বিতীয় দিনের মতো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ধর্মঘট চলছে।
গতকাল মঙ্গলবার নগরীর চারটি ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রতিবাদে তিন দফা দাবিতে মঙ্গলবার দুপুর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই ধর্মঘট ডেকেছে জেলার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতি।
ধর্মঘটের ফলে দুর্ভোগে পড়েছে রোগী ও স্বজনরা। তারা ডাক্তার দেখাতে এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে পারছে না।
এদিকে জরিমানার পর মঙ্গলবার রাতেই জরুরি সভা আহ্বান করে রাজশাহীর বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতি। ওই সভায় তিন দফা দাবি করে তা আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
জরুরি সভায় পর রাজশাহী জেলা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলোর কথা জানান।
দাবিগুলো হলো মঙ্গলবারের অভিযানকালে আটক দুই কর্মকর্তার নিঃশর্ত মুক্তি, ১৯৮৩ সালের ক্লিনিক পরিচালনা আইন অনুযায়ী জরিমানা করা এবং রাজশাহী সিটি করপোরশেন (রাসিক) আরোপিত অস্বাভাবিক ট্রেড লাইসন্সে ফি প্রত্যাহার ও সাইনবোর্ড ফি বাতিল করা।
সংবাদ সম্মেলনে মোখলেছুর বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত কর্মকর্তাদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি চাই। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা সহনীয় পর্যায়ে যেন রাখে এবং দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রচলিত আইন অনুযায়ী করা হয় যেন। দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের যে আইন আছে, আইন তো নাই—অর্ডিন্যান্স আছে… সেই মোতাবেক করবে। সিটি করপোরশেন ট্রেড লাইসন্সে ফি প্রত্যাহার ও সাইনবোর্ড ফি প্রত্যাহার করে নেওয়া।’
‘এই দাবিতে আমরা আজকের ধর্মঘট কন্টিনিউ করলাম। অনির্দিষ্টকালের জন্য রাখলাম। যদি কালকে আমাদের উক্ত কর্মকর্তাবৃন্দকে মুক্ত করে দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে হয়তো আমরা বিবেচনা করে দেখব ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে ফিরে আসার জন্য নতুবা কালকে (বুধবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আমরা আবার সভায় বসব।’
মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার আমানা হাসপাতাল, রয়্যাল হাসপাতাল, রাজশাহী জেনারেল হাসপাতাল ও গ্রিন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালান র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সে সময় এসব প্রতিষ্ঠানে মেয়াদোত্তীর্ণ ও আমদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতির ব্যবহার এবং সরকারি ওষুধ পাওয়া যায়। সে জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সোয়া আট লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় আমানা ও রয়্যাল হাসপাতালের দুই কর্মকর্তাকেও গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার আলম জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতা নিয়ে র্যাব সারা দেশের বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে তাঁরা রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার আমানা হাসপাতাল ও রয়্যাল হাসপাতালে অভিযান চালান। এ সময় সেখানে সরকারি ওষুধ, মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ছাড়াও বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়া পরে। এ কারণে আমানা হাসপাতালকে সাড়ে তিন লাখ টাকা জরিমানা ও ব্যবস্থাপক মোবারক হোসেনকে আটক করা হয়। আর রয়্যাল হাসপাতালকে পৌনে চার লাখ টাকা জরিমানা ও ব্যবস্থাপক কাজেম আলীকে আটক করা হয়েছে।
আমানা হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক শামীম হোসেন জানান, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা বিকেলে এখানে রোগী দেখেন এবং প্রয়োজনীয় অপারেশন করান। তাঁরা যদি সঙ্গে করে সরকারি কোনো ওষুধ নিয়ে আসেন, তার দায়-দায়িত্ব তো আমানা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিতে পারে না। তাঁর দাবি, এই হাসপাতালে মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় না।
ধর্মঘট প্রসঙ্গে শামীম আরো জানান, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির পক্ষ থেকে হাসপাতাল অনির্দিষ্টকালের যন্ত্র বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তাঁরা হাসপাতালের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। মালিক সমিতি আবার যখন হাসপাতাল চালু করতে বলবে, তখন থেকে হাসপাতাল চালু করা হবে।