হলি আর্টিজানের রায় : হামলার শঙ্কায় আদালতপাড়ায় নিরাপত্তার চাদর

আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলায় মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আগামীকাল বুধবার আদালতপাড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জাফর হোসেন এ বিষয়ে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজ ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে তিনি আদালতপাড়ায় নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন।’
অপরদিকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক বেনজির আহমদ, ‘হলি আর্টিজানের রায় মাথায় রেখে আমরা আজ থেকে সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছি। আমাগীকালও আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে।’
পুলিশের ডিসি জাফর হোসেন আরো বলেন, আগামীকাল এ রায় উপলক্ষে হামলার আশঙ্কা আমরা একবারে উড়িয়ে দিচ্ছি না। আদালতপাড়ায় আগামীকাল কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে। এ ছাড়া আদালতপাড়ায় আগামীকাল অনেকের প্রবেশে কড়াকড়িসহ আইডি কার্ড প্রদর্শন করে প্রবেশ করতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) গোলাম সারওয়ার খান (জাকির) বলেন, আগামীকাল দুপুর ১২টায় আদালতে রায় ঘোষণা করা হবে। তবে আসামিদের সকাল ৯টায় আদালতে হাজির করা হবে। তাদের উপস্থিতিতে এ মামলায় রায় ঘোষণা করা হবে।
এদিকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ আজ কমিউনিটি ব্যাংকের মতিঝিল শাখার উদ্বোধন শেষে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা চাই, জঙ্গিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। হলি আর্টিজানের ঘটনার পর কিন্তু আমরা কখনও জঙ্গিবাদ থেকে দৃষ্টি সরাইনি। এমন কোনো সপ্তাহ নেই যে সপ্তাহে আমরা জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করছি না। যে কোনো মূল্যে আমরা আমাদের দেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত করব। দেশে জঙ্গিদের কোনো স্থান নেই।’
র্যাবের প্রধান আরো বলেন, ‘তবে মনে রাখতে হবে জঙ্গিবাদ যেহেতু বৈশ্বিক বিষয় সেহেতু বিশ্বব্যাপী নির্বংশ না হওয়া পর্যন্ত এই ঝুঁকি থেকে যাবে। হলি আর্টিজানের ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকটি পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা রয়েছে।’
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। হামলার পর রাতেই তারা ২০ জনকে হত্যা করে। সেদিনই উদ্ধার অভিযানের সময় বন্দুকধারীদের বোমার আঘাতে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। পরের দিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে নিহত হয় পাঁচ হামলাকারী। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজনের মৃত্যু হয়।
জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হামলার দায় স্বীকার করে। সংগঠনটির মুখপত্র ‘আমাক’ হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করে বলে জানায় জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স’। এ ঘটনায় গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় কাল আটজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে। এর মধ্যে ছয়জন কারাগারে আছেন, বাকি দুজন পলাতক।
কারাগারে থাকা ছয় আসামি হলো জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান ও হাদিসুর রহমান সাগর। এ ছাড়া এ মামলায় শহীদুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন পলাতক রয়েছেন।
গত বছরের ২৬ নভেম্বর মামলাটির বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল। এর আগে গত বছরের ২৩ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়। পরে হাসনাত করিমকে অব্যাহতি দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েস।
এ মামলায় অভিযোগপত্রে ২১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে আটজন আসামি বিভিন্ন অভিযানে ও পাঁচজন হলি আর্টিজানে অভিযানের সময় নিহত হয়েছে। এ ছাড়া জীবিত আটজনের বিচার হচ্ছে।
অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গি হলো রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।
এ ছাড়া বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানে নিহত আটজন হলো তামীম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।