হঠাৎ উত্তপ্ত রাজধানী, বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ

পূর্ব কোনো ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ বিএনপি নেতাকর্মীদের রাজপথ দখলের ফলে ঘণ্টা খানেকের জন্য উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজধানীর রাজপথ। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে প্রেসক্লাব এলাকা থেকে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হাইকোর্ট এলাকায় অবস্থান করে দলটির নেতাকর্মীরা।
এর পরই আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মধ্যে। বিএনপি নেতাকর্মীদের হাইকোর্ট এলাকায় অঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরাতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ যখন বিএনপি নেতাকর্মীদের সরানোর জন্য মৎস্য ভবন এলাকা থেকে হাইকোর্ট এলাকায় আসে তখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে পুলিশ সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে লাঠিপেটা করে এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে নিক্ষেপ করে অবস্থানকারীদের দাওয়া দেয়। এ সময় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা হাইকোর্ট এলাকা ত্যাগ করার সময় বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করে। এসবের মাঝে রয়েছে একটি কালো বিএমডব্লিউ, চারটি সাদা ও ছাই রঙের প্রিমিউ গাড়ি, একটা পিকআপ, নোহাসহ বেশ কিছু গাড়ি৷
বিএনপি নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ বেশ কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে এবং লাঠিপেটা করে। এ ছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীদের ছোড়া ইট পাল্টা ছুড়ে মেরে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে পুলিশও।
ডিএমপির রমনা জোনের সহকারী কমিশনার শেখ মো. শামীম বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে আমাদের ওপর আগে ইটপাটকেল ছুড়ে। তখন আনুমানিক চার-পাঁচটি টিয়ারগ্যাস ছোড়া হয়।’
এর আগে আজ দুপুর ১টার দিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে বিপুল নেতাকর্মী জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে বিশাল মিছিল বের করে। মিছিলটি হাইকোর্টের দিকে অগ্রসর হয়ে হাইকোর্টের দ্বিতীয় গেটে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় হাইকোর্ট থেকেও বিএনপিপন্থী আইনজীবীসহ অনেকেই মিছিলে যোগ দেয়।

মিছিলে হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেয়। হাইকোর্টের দ্বিতীয় গেটসহ আশপাশের সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নেতাকর্মীরা হাইকোর্টের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে।
ওই সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, ‘আমরা কোনো অসাংবিধানিক কাজ করছি না। দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে হাজার হাজার নেতাকর্মী ঘর ছেড়ে আজ রাজপথে নেমেছে। রাজপথই আমাদের ঠিকানা। যতক্ষণ পারি, ততক্ষণ অবস্থান করব। পুলিশ যেন আমাদের উসকানি না দেয়।’
নোমান বলেন, ‘আজকে রাস্তায় নামাটা অসাংবিধানিক নয় এবং আইনবিরোধীও নয়। জনগণ রাষ্ট্রক্ষমতার মালিক হওয়া সত্ত্বেও সবকিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশে বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামছাড়া ঊর্ধ্বগতি। পেঁয়াজ, চাল, তেল জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের বিরোধীদলের আন্দোলন করার অধিকার আছে। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আন্দোলন করার অধিকার আমাদের আছে।’
সরকারের উদ্দেশে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘অবিলম্বে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নামিয়ে আনুন। এবং দেশ চালাতে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনর্নির্বাচন দিন।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে নোমান বলেন, ‘আমরা আন্দোলন, মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি করছি। এটা সংবিধানবহির্ভূত নয়। তাই আপনাদের আহ্বান জানাব, আমাদের নেতাকর্মীদের বাধা না দিয়ে আমাদের কর্মসূচি পালন করতে দিন। আপনাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের উসকানি প্রত্যাশিত নয়।’