‘স্ত্রী’র বিরুদ্ধে অভিযোগ, পর্যটক তানভীরকে ডেকেছে মন্ত্রণালয়

সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে ‘স্ত্রী’র বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন বিশ্ব পর্যটক তানভীর মাহমুদ (অপু)। এ অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করতে তাঁকে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। তানভীর মাহমুদের ‘স্ত্রী’ মুসলিমা আক্তার (সীমা খান) পেট্রোবাংলার উপব্যবস্থাপক।
গত মঙ্গলবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাকিল আহমেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ে জানানো যাচ্ছে যে, আপনি পেট্রোবাংলার উপব্যবস্থাপক মিসেস মুসলিমা আক্তারের বিরুদ্ধে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযোগ সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি তারিখ সকাল ১১:০০ ঘটিকায় (কক্ষ নং-২১৫, ৩য় তলা, ভবন নং-৬, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা) আপনার ব্যক্তিগত শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এমতাবস্থায়, উক্ত শুনানিতে অভিযোগের স্বপক্ষে লিখিত বক্তব্য ও যথাযথ প্রমাণ/ডকুমেন্টসহ নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
চিঠির সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পত্র নং-২৮.০২.০০০০.০১২.১২.০২৪.১৭.২৯, তাং-১৯-০১-২০২১। চিঠির অনুলিপি জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উপসচিব (প্রশাসন-২ অধিশাখা), একই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের একান্ত সচিব, অতিরিক্ত সচিবের (প্রশাসন) ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, যুগ্ম সচিবের (প্রশাসন) ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, যুগ্ম সচিবের (পরিকল্পনা) ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বরাবরে পাঠানো হয়েছে।

মুসলিমা আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে তানভীর মাহমুদ উল্লেখ করেন, ‘পেট্রোবাংলার উপব্যবস্থাপক মুসলিমা আক্তারকে ২০১৭ সালের ৩ মার্চ ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক বিবাহ করি। বিবাহের পর থেকে আমরা মমতা ভিলা ৪৪/ইং, ইন্দিরা রোড, একসাথে বসবাস করি। যদিও আমি বিগত ২০০৬ সাল থেকে ফিনল্যান্ডে বসবাস করি। যে কারণে বিবাহের পর আমি ফিনল্যান্ডে গমন করলে আমার স্ত্রীও আমার সাথে ফিনল্যান্ডে বসবাস করার ইচ্ছে পোষণ করেন। এমতাবস্থায় ফিনল্যান্ডে নিয়ে আসার জন্য আমি সব ধরনের ব্যবস্থা করতে থাকি। এবং তাকে অনুরোধ করি ফিনল্যান্ডে এলে পেট্রোবাংলার উপব্যবস্থাপকের পদ থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করার জন্য। কেননা বাংলাদেশের আইনে কোনো নাগরিক যদি অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে তাহলে তার সরকারি চাকরিসহ সরকারি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ত্যাগ করতে হয়। কিন্তু আমার স্ত্রী মুসলিমা ২১ নভেম্বর ২০১৯ সাল থেকে ২১ নভেম্বর ২০২৩ তারিখের জন্য ফিনল্যান্ডের স্থায়ী নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। অদ্যবধি ফিনল্যান্ডের স্থায়ী নাগরিকত্ব থাকা অবস্থায় পেট্রোবাংলার উপব্যবস্থাপক পদে অব্যাহতি গ্রহণ করেনি।
এমতাবস্থায়, আমার স্ত্রী পেট্রোবাংলার উপব্যবস্থাপক মুসলিমা আক্তারের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর বিধিমালা ৩১ (এ) পরিপন্থি বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ করায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৩ (খ) অনুযায়ী অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত করে শাস্তি প্রদানের জন্য অনুরোধ করছি।’

তানভীর মাহমুদ গত বছরের ৭ ডিসেম্বর মুসলিমা আক্তারের বিরুদ্ধে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডি নম্বর ৪০৭।
এর আগে মুসলিমা আক্তার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘তানভীর মাহমুদের সঙ্গে আমার ডিভোর্স (বিবাহ বিচ্ছেদ) হয়েছে। আর ফিনল্যান্ডে বসবাসের বিষয়টি সরকারের সব নিয়ম মেনেই করা হয়েছে।’
তবে মন্ত্রণালয়ে তানভীরের লিখিত অভিযোগ ও শুনানির বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার কথা বলার জন্য মুসলিমা আক্তারকে একাধিকবার ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। তাঁর মুঠোফোন নম্বরে খুদেবার্তা পাঠালেও তার কোনো উত্তর দেননি।
মুসলিমার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগের বিষয়ে তানভীর মাহমুদ (অপু) এনটিভি অনলাইকে বলেন, ‘সে আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আবার সরকারি চাকরি করা অবস্থায় ফিনল্যান্ডের নাগরিকত্বও নিয়েছে যা প্রতারণার শামিল। আমি চাই, আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা যেন আর কোনো প্রবাসীর সঙ্গে না হয়। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
ডিভোর্সের বিষয়ে তানভীর মাহমুদ বলেন, ‘ডিভোর্স লেটার পেয়েছি।’ তবে এখনো তা কার্যকর হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।