ম্যাগনেটিক রাইস কয়েন প্রতারক চক্রের তিন সদস্য গ্রেপ্তার

ম্যাগনেটিক রাইস কয়েন প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে ২০ লাখ টাকাসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির একটি দল। গতকাল রোববার রাজধানীর বনানী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার আব্দুল ওয়াজেদের ছেলে মো. জসিম উদ্দিন (৪২), বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার সর্দ্ধনকুঠি গ্রামের মোশারফের হোসেনের ছেলে মো. সুজন মিয়া (৩২) ও বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের লাল মিয়ার ছেলে মো. রিপন মিয়া (৩৬)।
তদন্তে জানা যায়, প্রতারক চক্রটি জাতীয় পার্টির নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য ও শিল্পপতি এম এ তালহাকে জানান, তাদের কাছে বহু মূল্যবান ম্যাগনেটিক রাইস কয়েন আছে। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলের এই ম্যাগনেটিক কয়েনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে অন্তর্জাতিক বাজারে। যা আমেরিকার স্পেস রিসার্চ সেন্টারের (নাসা) কাছে কয়েকশ কোটি টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। ভিকটিম কৌতুহলী হয়ে কথিত কয়েনটি দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
আসামিরা জানান, তাদের পূর্বপরিচিত ইন্ডিয়ান খ্যাতনামা কোম্পানির একজন প্রতিনিধি বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তিনি কয়েনগুলো কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। প্রতারক চক্রটি পরবর্তী সময়ে ভিকটিম তালহাকে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে নিয়ে যান। সেখানে চক্রের আরেক সদস্য আমিনুল ইসলাম নিজেকে ইউরেনিয়াম এনার্জি লিমিটেডের সিনিয়র টেকনিশিয়ান হিসেবে দাবি করেন। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের অনেক নামী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি তাঁর মাধ্যমে ম্যাগনেটিক কয়েনের ব্যবসা করেই সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বিভিন্ন আলোচনায় ভিকটিম তাদের কথায় আকৃষ্ট হয়ে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখালে প্রতারক চক্রের একাধিক সদস্য বিভিন্ন সময়ে তাঁর বাসায় আসেন। নানান ধরনের লোভনীয় কথা বলে তাঁদের সঙ্গে ম্যাগনেটিক কয়েন ব্যবসায় বিনিয়োগে প্রলুব্ধ করেন। কথিত কয়েনের সাজানো মালিকের কাছ থেকে কয়েনের ইউনিট ক্রয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে রিপোর্ট সংগ্রহ, প্যাকিং প্রক্রিয়া, বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধির বিভিন্ন ব্যয়ভার বহন, বিক্রয় মধ্যস্থতাকারী এজেন্টের পাওনা অগ্রিম দেওয়াসহ বিভিন্ন কথা বলে ভিকটিমের কাছে থেকে নব্বই লাখ চার হাজার নগদ টাকা হাতিয়ে নেন।
পরে এ ব্যাপারে বনানী থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটি সিআইডির কাছে তদন্তাধীন রয়েছে। গোপন সূত্রে সিআইডি জানতে পারে, এই প্রতারক চক্র আবারো শিল্পপতি এম এ তালহাকে রাইস কয়েনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
এই সংবাদের ভিত্তিতে অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াডের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেনের তত্ত্বাবধানে সিনিয়র এএসপি আবু সাইদের নেতৃত্বে একটি দল প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে বনানী থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
এ সময় চক্রটির হেফাজত থেকে ২০ লাখ ২৫ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। মামলাটি সিআইডির তদন্তাধীন রয়েছে।