নারায়ণগঞ্জের দেওভোগের এক কিশোরীকে ধর্ষণ ও হত্যার বিষয়ে আদালতে তিন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর ওই কিশোরীর জীবিত উদ্ধারের ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম এ তথ্য জানান।

পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, ওই কিশোরীর অপহরণ, ফিরে আসা এবং তিন আসামির দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিসহ প্রকৃত রহস্য উদ্‌ঘাটনে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করছে। চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা মামলা, আসামিদের গ্রেপ্তার ও জবানবন্দির বিষয়সহ পুরো ঘটনার সঠিক রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে গত সোমবার রাতেই জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদ পারভেজ চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে পুলিশের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জবানবন্দি আদায় ও আসামিদের পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগের বিষয় তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এ টি এম মোশারফ হোসেনকে প্রধান করে আরো একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরের কমিটির প্রতিবেদন আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রোকন উদ্দিন অভিযোগ করেন, পুলিশ নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে কিশোরী উদ্ধারের পরও আদালতে এফআরটি (ফাইনাল রিপোর্ট) প্রদান না করে উল্টো তিন আসামির ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া জবানবন্দি প্রদানের সূত্র ধরে অন্য মামলায় আসামি হিসেবে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তিনি দাবি করেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করেছেন।

রোকন উদ্দিন বলেন, ‘পুলিশ আদালতে এফআরটি (ফাইনাল রিপোর্ট) না দিলে আমরা ন্যায়বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করব।’

তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন দাবি করেন, মামলা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই। ভিকটিম উদ্ধার হয়েছে। বাদী যে মামলা করেছেন এবং নতুন যে মামলা হবে, এ দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত চলবে। তদন্ত শেষে প্রকৃত রহস্য বের হয়ে আসবে।’

ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, ‘মামলার বাদী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলাটি করেছেন কিনা বা কেন এই আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে, সেটি একটি রহস্য। এ কারণে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে রহস্য উন্মোচন করতে হবে।’

শহরের দেওভোগ এলাকার বাসিন্দা ১৫ বছরের ওই কিশোরী গত ৪ জুলাই নিখোঁজ হয়। দীর্ঘদিন খোঁজ করে মেয়ের সন্ধান না পেয়ে এক মাস পর ৬ আগস্ট থানায় অপহরণ মামলা করেন তার বাবা। এ ঘটনায় কিশোরীর মায়ের মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে গত ৭ ও ৮ আগস্ট পুলিশ একই এলাকার প্রেমিক আবদুল্লাহ, অটোচালক রকিব ও নৌকার মাঝি খলিল নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। এ তিন আসামি দুই দফা রিমান্ড শেষে কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করে ৯ আগস্ট আদালতে জবানবন্দি দেয়। বর্তমানে আসামিরা জেলহাজতে রয়েছে। ঘটনার প্রায় ৫০ দিন পর গত ২৩ আগস্ট মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকা থেকে ওই কিশোরীকে জীবিত ফিরে পাওয়ার পর তার বাবা-মা বিষয়টি রাতে সদর থানায় জানায়।

স্বজনদের দাবি, তাদের মেয়ে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এবং অন্য এক যুবক ইকবাল হোসেনের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করে ভাড়া বাসায় বসবাস করেছে। আসামিদের বিরুদ্ধে এখন তাদের আর কোনো অভিযোগ নেই এবং মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা জানান।

তবে মঙ্গলবার কিশোরীর মা ভিন্ন কথা বলেন। তিনি বলেন, আসামি আবদুল্লাহ বন্ধু হিসেবে প্রায়ই তার মেয়ের সঙ্গে কথা বলত। ঘটনার দিন মোবাইল ফোনে তাঁর মেয়েকে ডেকে নিয়েছে সে। ওই হিসেবে আবদুল্লাহ দোষী। তবে প্রশাসনের তদন্তে যে অপরাধ করেছে, তারা তার শাস্তি চান। একই সঙ্গে তার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ইকবাল হোসেনেরও শাস্তি চান তিনি।