মানিকগঞ্জ জেলাকে লকডাউন ঘোষণা

মানিকগঞ্জ জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। আজ রোববার সন্ধ্যা ৭টা থেকে এটি কার্যকর করা হচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে বলে জানান করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস।
এর আগে আজ বিকেল ৩টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভায় উপস্থিত সবার সম্মতিতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
ওই সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য সচিব জেলা সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ, পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম, পৌর মেয়র গাজী কামরুল হুদা সেলিমসহ কমিটির অন্য সদস্যরা।
জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, জীবন রক্ষাকরণের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না। এর মধ্যে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কোনো কাজেই ঘরের বাইরে আসা যাবে না। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক বা সড়ক ও নৌপথে অন্য কোনো জেলা থেকে এ জেলায় কিংবা এ জেলা থেকে অন্যত্র যাওয়া যাবে না। জেলার অভ্যন্তরে আন্তউপজেলায়ও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
তবে এই লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট এবং এতদ্বসংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মী; চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মী, ওষুধশিল্প সংশ্লিষ্ট যানবাহন ও কর্মী, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী, খাদ্যদ্রব্য, শিশুখাদ্য, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য এবং পশুখাদ্য পরিবহন কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মী, কৃষিপণ্য, সার, কীটনাশক, জ্বালানি ইত্যাদি পণ্য পরিবহনকাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মী, কৃষিজ-পণ্য উৎপাদন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদন, দুগ্ধপণ্য উৎপাদন, খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনসহ জীবনধারণের মৌলিক পণ্য উৎপাদন ও পরিবহন কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মী, এই সব পরিষেবাসমূহ সংশ্লিষ্ট রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মী, প্রেস ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যানবাহন ও কর্মী।
যেসব কারণে মানিকগঞ্জ জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি আকারে বিস্তার লাভ করায় লাখ লাখ লোক আক্রান্ত হয়েছে এবং দেড় লক্ষাধিক লোক মৃত্যুবরণ করেছে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। হাঁচি, কাশি ও পরস্পর মেলামেশার কারণে এ রোগের বিস্তার ঘটে। এখন পর্যন্ত এ রোগের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করা যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী এ রোগের একমাত্র প্রতিষেধক হলো পরস্পরের নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করা। জনসাধারণের একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা নিষিদ্ধ করা ছাড়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে এবং সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৬১ নম্বর আইন)-এর ১১(১)/(২) ধারার ক্ষমতাবলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সমগ্র বাংলাদেশকে সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছেন। এ ছাড়া, মানিকগঞ্জ জেলার আশপাশের জেলাসমূহে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে সেসব জেলার লোকজনের বেআইনি অনুপ্রবেশ ঘটছে।
এ পর্যন্ত মানিকগঞ্জ জেলায় সাতজন ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন আছে।