‘বন্ধুর ষড়যন্ত্রে’ বন্ধু সেবকের ঝুলন্ত লাশ

ফরিদপুর শহরের শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গনের নিজ ঘর থেকে বন্ধু সেবক ব্রহ্মচারী নামের এক সাধুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার সকালে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
স্থানীয়রা জানান, মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তে বন্ধু সেবক ব্রহ্মচারী তাঁর ফেসবুক আইডিতে বিভিন্ন সময়ে শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গনের ভেতরে ঘটে যাওয়া নানা অনিয়ম নিয়ে প্রতিবাদ করে একটি পোস্ট দেন। এতে তিনি গত তিন দিন শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গনের সাধারণ সম্পাদক বিজ্ঞান বন্ধু ব্রহ্মচারীর সঙ্গে বিরোধ চলে আসছিল বলে পোস্টটিতে উল্লেখ করেন। আর এরই জের ধরে তিনি নিজ কক্ষের ফ্যানের সঙ্গে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
এদিকে সকালে খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বেলাল হোসেন জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে আজ ভোরে সাধু বন্ধু সেবক ব্রহ্মচারী তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেন :
‘জয় জগদ্বন্ধু হরি শ্রীধাম শ্রীঅংগন ফরিদপুর।
জীবনের শেষ লেখা শেষ কথা :
এভাবে পৃথিবী ছেড়ে যাবার কথা ছিল না। পরিস্থিতির কারণে যেতে হচ্ছে। কলংককে মৃত্যুর সমান মনে করি। এর জন্য দায়ী শ্রীঅংগন মহানাম সমপ্রদায়ের সাঃ সম্পাদক বিজ্ঞান বন্ধু। তারই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। দুই নারীকে আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল চিত্তের মানুষ। অনুরোধ করব, দুবলতা ঝেড়ে ফেলুন। জেগে ওঠুন। বহুমুখী গণতন্ত্রের ভিত্তিতে সংগঠন গড়ে তুলুন। মহানাম সম্প্রদায়ে সাধুর অভাব নেই। আছে শুধুই মনের অভাব। সবাইকে ডেকে ঐক্য গড়ে তুলুন।
আমার আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে শ্রীঅংগনের ও সম্প্রদায়ের মধ্যকার আসুরিক শক্তির বিনাশ ঘটুক। শুভশক্তির উদ্বোধন হোক, জাগরণ ঘটুক, এই কামনা করি। প্রভুর নাম স্মরণ করতে করতে ফাঁসির দড়ি গ্রহণ করব এবং নাম করতে করতে চলে যাব। পাপ-পুণ্য কোনোটাই আমায় স্পর্শ করবে না আমার বিশ্বাস।
জয় জগদ্বন্ধু হরি।
বন্ধু সেবক’
এদিকে, এ ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করেছেন ফরিদপুর শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গন কমিটির সাবেক সদস্য প্রয়াত অ্যাডভোকেট কমল কৃষ্ণ গুহের (বাবু ফরিদী) সন্তান লেখক ও গবেষক দেব দুলাল গুহ। তিনি বন্ধু সেবক ব্রহ্মচারীর ওই ফেসবুক পোস্ট ও নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, “ফরিদপুর শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গনে এটা আত্মহত্যা নয়, হত্যাকাণ্ড। বন্ধু সেবক ব্রহ্মচারীর মতো সৎ নিখাঁদ ভালো মানুষ আমি আর দেখিনি। তাঁকে মিথ্যা অভিযোগে ৭ দিনের মধ্যে আঙিনা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার পর তিনি রাগে-ক্ষোভে নিজের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি দান করে দিয়ে আঙিনা ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এই মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে হয়তো তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। আবার হয়তো কেউ তাঁকে মেরেও ঝুলিয়ে দিতে পারে। আজ সকালে তাঁর রুম থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানলাম।

এই ঘটনায় শ্রীঅঙ্গন কমিটি কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না। স্থানীয়দের ভাষ্য, মন্দিরের টাকা নয়ছয় না করতে পারায় তাঁকে সরানোর পথ খুঁজছিল কমিটির কেউ কেউ। তবে কমিটি ও স্থানীয় নেতাদের ভয়ে কেউ হয়তো মুখ খুলবে না। তিনি অর্থভাণ্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। আমাদের মধ্যে ছিল ‘মামা-ভাগ্নে’ সম্পর্ক। আমি আমার মামার হত্যার বিচার চাই। কোনোভাবেই এটাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা যেন সফল না হয়। মন্দিরের পিছেই আমাদের বাড়ি। আমাদের ওপরও অনেকদিন ধরেই অমানষিক নির্যাতন চলছে। গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর আমাকেও আঙিনার ভেতর বেদম পেটানো হয়েছে। সৎ ভালো মানুষেরা আবেগী হয়। তিনি আইনে পড়ালেখা করেছিলেন, থাকতেন সত্যের পক্ষে। বন্ধু সেবক ব্রহ্মচারীর লাশ যেন কিছুতেই সঠিক ময়নাতদন্ত ছাড়া দাহ করা না হয়। আমি এই এলাকার সন্তান ও কমিটির সাবেক সদস্য প্রয়াত অ্যাডঃ কমল কৃষ্ণ গুহ (বাবু ফরিদী)-এর সন্তান হিসেবে এই ঘটনায় দায়ী সবার শাস্তি চাই।”