বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, দেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক ডেপুটি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম আর নেই। মঙ্গলবার (৯ মে) ভোররাতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বার্ধক্যজনিত জটিলতায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নাল্লিাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।

ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

নুরুল ইসলাম ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ও আস্থাভাজনদের একজন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি তিনি পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত যুদ্ধ পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নেতৃত্বের ভূমিকার জন্য স্মরণীয় থাকবেন। পাকিস্তান সরকারের কাছে আওয়ামী লীগের পেশ করা ছয় দফার প্রাথমিক প্রণেতাদের একজন ছিলেন তিনি।

১৯৬১ সালে নুরুল ইসলাম, রেহমান সোবহান ও হাবিবুর রহমান মিলে পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের ওপর একটি সেমিনারের আয়োজন করেন, যা স্বাধীনতার জন্য সমর্থন জোগাতে সহায়ক হয়েছিল।

নুরুল ইসলাম ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্স (পরবর্তীতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ) এর পরিচালক পদে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন।

নুরুল ইসলাম লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নাফিল্ড ফাউন্ডেশনের ফেলো ছিলেন। তিনি নেদারল্যান্ডস স্কুল অব ইকোনমিক্সে রকফেলার ফেলো হিসেবেও কাজ করেছেন এবং অক্সফোর্ডের সেন্ট অ্যান্টোনি’স কলেজের একজন ফেলো ছিলেন।

নুরুল ইসলাম জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সহকারী মহাপরিচালক এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতি বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন।

নুরুল ইসলামের বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আইএ সম্পন্ন করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পর তিনি ১৯৫৫ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাত্ত্বিক ও ফলিত উন্নয়ন অর্থনীতিতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার (২০০৯) লাভ করেন নুরুল ইসলাম। তিনি ২৯টি বই রচনা করেছেন।