ঢাকায় ভোটের লড়াই শুরু

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর পদে ভোট গ্রহণ আজ শনিবার সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে। বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
এবার দুই সিটিতে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত (নারী) কাউন্সিলর প্রার্থীসহ মোট ৭৪৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে মেয়র প্রার্থী ১৩ জন।
আজ শনিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে সিটির ভোট গ্রহণ চলবে। প্রস্তুতি হিসেবে গতকাল শুক্রবার সারা দিন বিশেষ নিরাপত্তার মাধ্যমে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয় ইভিএমসহ নির্বাচনী মালামাল।
দুই সিটিতে মোট দুই হাজার ৪৬৮টি ভোটকেন্দ্রে আছে। এর মধ্যে এক হাজার ৫৯৭টি কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাকি কেন্দ্রগুলোকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে ইসি। সুতরাং মোট ৬৪ দশমিক ৭১ শতাংশ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুকিপূর্ণ কেন্দ্রে মোট ১৮ জন ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন।
দুই সিটিতেই মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইয়ে আছে বিএনপি। ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তাবিথ আউয়াল। আতিকুল ইসলাম গত বছর মেয়র পদে উপনির্বাচন করে জয়ী হন। আনিসুল হকের মৃত্যুতে ওই পদটি শূন্য হয়। অন্যদিকে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে আনিসুল হকের কাছেই পরাজিত হন তাবিথ আউয়াল।
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি টানা তিনবার ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইশরাক হোসেন। তিনি অবিভক্ত ঢাকা সিটির সর্বশেষ মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার ৩২ ঘণ্টা আগে প্রার্থীদের প্রচারণা শেষ করতে হয়। উন্নয়নকে সামনে তুলে ধরে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার স্লোগান নিয়ে ভোটারদের কাছে গেছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপির প্রচারে ছিল দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ‘ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার’ দাবি।

ঢাকা উত্তর সিটিতে ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ এবং নারী ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন। উত্তরে মোট ভোটকেন্দ্রে ১ হাজার ৩১৮। মোট সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সংখ্যা ১৮টি। এ ছাড়াও ভোটকক্ষ রয়েছে ৭৫৪টি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ভোটার ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ এবং নারী ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ১৫০। সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫টি। এ ছাড়াও ভোটকক্ষের সংখ্যা রয়েছে ৮৭৬টি।
এদিকে নির্বাচনের আগে রাজধানীতে মোটরসাইকেল চলাচলে ৫৪ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইসি। এই নিষেধাজ্ঞা বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত বহাল থাকবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে ভোট গ্রহণের দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন করতে বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীতে ৭৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটের দিন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার সদস্য মোতায়েন করেছে ইসি। এদের মধ্যে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ ও আনসার নিয়োজিত থাকছে এবং বিজিবি, র্যাব ও নৌ-পুলিশ নির্বাচনী এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন বাহিনী বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ভোটের দায়িত্বে নিজ নিজ সদস্যদের নির্দিষ্ট জায়গায় মোতায়েন করেছেন।
এ ছাড়া পুলিশ ও এপিবিএন সমন্বয়ে ১২৪টি ভ্রাম্যমাণ ও ৪৩টি স্ট্রাইকিং টিম, র্যাবের ১২৯ টিম নিয়োজিত থাকছে। অর্থাৎ র্যাব, পুলিশ, এপিবিএন স্ট্রাইকিং ও ভ্রাম্যমাণ টিম মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজারের মতো ফোর্স মোতায়েন থাকছে। সব মিলিয়ে এ নির্বাচনে ৫০ হাজারের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন।
নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রতিপালন ও অপরাধের বিচার কাজের জন্য দুই সিটিতে ১২৯ জন নির্বাহী হাকিম ও ৬৪ জন বিচারিক হাকিম নিয়োগ করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে ৫৪ জন ও দক্ষিণ সিটিতে ৭৫ জন নির্বাহী হাকিম আজ থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকবেন। এ ছাড়া উত্তর সিটিতে ২৭ জন ও দক্ষিণে ৩৭ জন বিচারিক হাকিম ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ঢাকার এ দুই সিটি নির্বাচন গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে দেশবাসী ও বিদেশিরা। এ নির্বাচনে মোট ২২ প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ১৩ দেশি পর্যবেক্ষক কাজ করবেন। তাদের মধ্যে উত্তরে ৫০৩, দক্ষিণে ৪৫৭ এবং কেন্দ্রীয়ভাবে ৫৩ পর্যবেক্ষক পর্যবেক্ষণ করবেন। আর বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করবেন মোট ৭৪জন। তাদের মধ্যে ৪৬ বিদেশি এবং ২৮ বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন।
গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। কিন্তু ৩০ জানুয়ারি সরস্বতী পূজার দিনে ঢাকা সিটি নির্বাচনের তারিখ দেওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন পিছিয়ে ৩০ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করে ইসি, যাতে নির্বিঘ্নে সরস্বতী পূজা উদযাপন করতে পারেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।