‘জাবালে নূরের ৩ বাসের পাল্লায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়’

জাবালে নূর বাসের চালক ও চালকের সহকারীরা বেশি যাত্রী ওঠানোর লোভে যাত্রীদের কথা না শুনে জিল্লুর রহমান উড়াল সড়কের ঢালের সামনে রাস্তা ব্লক করে দাঁড়ায়।
এ সময় চালক মাসুম বিল্লাহ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ১৪-১৫ জন ছাত্রছাত্রীদের ওপর বাস উঠিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলেই দুজন শিক্ষার্থী নিহত হন।
এ মামলার অভিযোগপত্রে এভাবে রাস্তায় ছাত্র-ছাত্রী হত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রেপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, ‘সেদিন বাস দুটির চালক ও চালকের সহকারীরা দুই থেকে তিনবার ওভার ট্রেকিং করেন। জাবালে নূরের যে তিনটি বাসের রেষারেষিতে এ ঘটনাটি ঘটে, সেগুলোর নিবন্ধন নম্বর হলো ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭, ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৬৫৭ এবং ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৫৮০। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭ নম্বর বাসের চাপায় মারা যায় দুই শিক্ষার্থী। এই বাসটি চালাচ্ছিলেন মাসুম বিল্লাহ। ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৬৫৭ নম্বর বাসের চালক ছিলেন জুবায়ের এবং ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৫৮০ নম্বরধারী বাসটির চালক ছিলেন সোহাগ।’
তদন্ত কর্মকর্তা আরো বলেন, ঘটনার দিন দুপুরে রাজধানীর হোটেল র্যাডিসনের বিপরীত পাশের জিল্লুর রহমান উড়াল সড়কের ঢালের সামনের রাস্তার ওপর জাবালে নূর পরিবহনের তিনটি বাস রেষারেষি করতে গিয়ে একটি বাস রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের ওপর উঠে পড়ে। এতে দুই শিক্ষার্থী নিহত ও নয়জন আহত হয়। নিহত দুই শিক্ষার্থী হলো দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব (১৭) ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম (১৬)।
এদিকে আলোচিত এ মামলাটির রায় আগামীকাল রোববার ঘোষণা করবেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত।
এ বিষয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি তাপস কুমার পাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আগামীকাল রোববার বিকাল ৩টায় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত আলোচিত এ মামলায় রায় ঘোষণা করবেন। তবে এ মামলায় জাবালে নূর পরিবহনের মালিক মালিক শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে না। কারণ মামলায় তাঁর অংশ হাইকোর্ট বিভাগে স্থগিত আছে। তাই তাঁকে (মালিক) ছাড়াই রায় ঘোষণা করা হবে।
এ মামলায় ছয়জন আসামিরা হলেন- জাবালে নূর পরিবহনের মালিক জাহাঙ্গীর আলম, দুই চালক মাসুম বিল্লাহ ও জুবায়ের সুমন এবং তাদের সহকারী এনায়েত হোসেন। এসব আসামি কারাগারে রয়েছেন। এ ছাড়া জাবালে নূর পরিবহনের আরেক মালিক শাহাদাত হোসেন জামিনে রয়েছেন। তাঁর পক্ষে মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। চালকের সহকারী কাজী আসাদ এখনও পলাতক রয়েছেন।
গত বছরের ২৫ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েস আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে ছয়জনকে আসামি করা হয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুপুরে চালক ও তাদের সহকারীরা বেশি যাত্রী ওঠানোর লোভে যাত্রীদের কথা না শুনে জিল্লুর রহমান উড়াল সড়কের ঢালের সামনে রাস্তা ব্লক করে দাঁড়ায়। এ সময় চালক মাসুম বিল্লাহ সেখানে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ১৪-১৫ জন ছাত্রছাত্রীর ওপর বাস উঠিয়ে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই দুই শিক্ষার্থী নিহত ও নয়জন আহত হয়।
নিহতরা হলো- ওই কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব (১৭) ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম (১৬)। সেদিন বাস দুটি দুই থেকে তিনবার একে অপরকে ওভারটেক করে। এ ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন।
এরপর মিরপুর ও বরগুনা জেলায় অভিযান চালিয়ে জাবালে নূরের তিন বাসের তিন চালক এবং তাদের দুই সহযোগী এনায়েত ও রিপনকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এই দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ‘সবার জন্যে নিরাপদ সড়কের দাবিতে’ রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা। ‘আমরা সুবিচার চাই’ স্লোগান সম্বলিত ব্যানার নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে তারা। এর পরেই দেশে ‘নতুন সড়ক পরিবহন’-২০১৮ অনুমোদন দেওয়া হয়। নতুন সড়ক পরিবহন আইন এ বছরের ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে। আইনটি কার্যকরের তারিখ ঘোষণা করে এরই মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
নতুন সড়ক পরিবহন আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া পেশাদার বা অপেশাদার চালক গাড়ি চালালে কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রেখে ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ মন্ত্রিসভা আইনটির খসড়ায় অনুমোদন দেয়। গত বছরের ৮ অক্টোবর ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ এর গেজেট জারি করা হলেও তার কার্যকারিতা ঝুলে ছিল।
আইনের খসড়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়। গাড়ি চালানোর সময় চালকদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের জন্যও দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।