জঙ্গিরা কারাগার থেকে ‘কালো টুপি’ সংগ্রহ করেনি, দাবি কারা কর্তৃপক্ষের

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলায় মামলার রায়ের পর সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গিরা আদালত চত্বরে আরবি হরফে লেখা সম্বলিত যে ‘কালো টুপি’ পরিধান করেছিল, সেগুলো কারাগার থেকে সংগ্রহ করা হয়নি বলে দাবি করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
ডেপুটি আইজি প্রিজন টিপু সুলতান আজ শনিবার সন্ধ্যায় এনটিভি অনলাইনের কাছে এই দাবি করে বলেন, ‘এ ব্যাপারে কারা কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতিও নেই।’
যদিও এর আগে গত বৃহস্পতিবার পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে, জঙ্গিরা এই টুপি কারাগার থেকেই সংগ্রহ করেছে। দুদিন বাদে আজ কারা কর্তৃপক্ষ এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করলো।
গত বুধবার আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর গুলশান হামলার রায়ে সাত জঙ্গির ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। একজনকে খালাস দেওয়া হয়। রায় শোনার পর পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সামনে আদালত চত্বরে তিন জঙ্গি কালো টুপি পরিধান করে স্লোগান দিতে থাকে। টুপিতে আরবি হরফে লেখা ছিল।
গণমাধ্যম এই টুপিকে ‘আইএস টুপি’ বলে অভিহিত করেছে। যদিও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা দাবি করেছেন, তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএসের কোনো টুপি নেই। তবে আইএস কালো পতাকা বহন করে এবং সেই পতাকায় আরবি হরফে লেখা থাকে। বিশ্লেষকদের ধারণা, হয়তো জঙ্গিরা কালো কাপড়ের টুপিতে আরবি লেখা দিয়ে তাদের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
এ ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে জঙ্গিরা কীভাবে এই টুপি সংগ্রহ করল এবং আদালত চত্বরে পড়ল, তা নিয়ে শুরু হয় জল্পনা-কল্পনা। কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দ্রুততার সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য নির্দেশ দেন। পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলমের নেতৃত্বে কমিটির বাকি দুই সদস্য হচ্ছেন ডিবি পুলিশের ঢাকা উত্তর শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান ও ডিবির এডিসি (আইএডি)।
পুলিশের কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, ‘টুপিগুলো তাদের (জঙ্গিদের) পকেটেই ছিল। কারাগার থেকে জঙ্গিদের নিয়ে আসার সময় ব্যাপক নিরাপত্তা ছিল। বাইরে থেকে টুপি সংগ্রহ করার সুযোগ নেই। পরে তারা পকেট থেকে টুপিগুলো বের করে মাথায় দিয়েছিল।’
অপরদিকে ঘটনার তদন্তে কারা কর্তৃপক্ষও একটি কমিটি গঠন করে তদন্ত চালায় বলে আজ ডেপুটি আইজি প্রিজন টিপু সুলতান। তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন কারা কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। আমাদের তদন্ত কমিটিতে ছিলেন আইজি প্রিজন, ডিএইজি প্রিজন-ঢাকা আর এআইজি প্রিজন। তদন্ত কমিটি আজ শনিবার তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।’
‘ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে কারা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি নেই এবং কারাগার থেকে টুপি সংগ্রহ করেনি জঙ্গিরা।’
কারা কর্তৃপক্ষের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘তদন্ত কমিটির সদস্যরা কারাগারের সিসিটিভির ফুটেজসহ সব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখেছেন। তদন্তে কোনোভাবেই প্রমাণ হয়নি কারাগার থেকে জঙ্গিরা টুপি পেয়েছেন। সোজা কথা, জঙ্গিরা কারাগার থেকে টুপি পায়নি। এমনকি এই ব্যাপারে আমাদের কারা কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই। এসব ব্যাপারে খুব ভালোভাবেই তদন্ত করে দেখা হয়েছে।’
ডেপুটি আইজি প্রিজন টিপু সুলতান আরো জানান, আজ বিকালে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন আইজি প্রিজনের কাছে জমা দিয়েছে। কখন প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে তা আইজি প্রিজন বলতে পারবেন।
গত বুধবার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা মামলার রায় ঘোষণা উপলক্ষে আট আসামিকে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে হাজিরের সময় আসামিদের মুখে হাসি ছিল। এর পরে তাদের আদালতের হাজতখানায় কড়া নিরাপত্তায় রাখা হয়। তবে আসামিদের আদালতের হাজিরের সময় তাদের মাথায় কোনো ধরনের টুপি দেখা যায়নি।
এরপর দুপুর ১২টার পর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান হলি আর্টিজানের মামলায় রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। একই সঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেওয়া হয়।
এরপর আদালতের এজলাসে আসামিদের কাঠগড়ায় থাকা আসামি জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের লোগোযুক্ত কালো টুপি পরে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে ধ্বনি দেয়। একই সময় আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যান ও মো. শরিফুল ইসলাম খালেদ একই ধরনের টুপি পরে। এরপর তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় মো. আবদুস সবুর খান নামের আসামি এক আইনজীবীকে হত্যার হুমকি দেয়।