কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন

কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় অবস্থিত শরণার্থী শিবিরগুলোতে ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি বছর ক্যাম্পগুলোতে পাঁচ লাখেরও বেশি গাছ রোপণের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
তিন বছর আগে যখন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গারা উখিয়া ও টেকনাফের ঘন বন জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল তখন রোহিঙ্গারা বনের লাখ লাখ গাছ কেটে ঝুপড়িঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করে। পর্যায়ক্রমে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন পাহাড়ের প্রায় আট হাজার একর জায়গাজুড়ে ৩২টি নতুন ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়। এসব ক্যাম্প গড়তে কাটা হয়েছে শতাধিক উঁচু পাহাড়ও। যদিও সরকারি হিসাবে শরণার্থী ক্যাম্পের জন্য বন বিভাগ সাড়ে ছয় হাজার একর জায়গা বরাদ্দ দেয় বলে উল্লেখ আছে।
ইউএনএইচসিআরের হিসাব মতে, বর্তমানে ৩৪ শরণার্থী ক্যাম্পে আট লাখ ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তাদের জন্য ক্যাম্পগুলোতে সোয়া দুই লাখ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের আগে আসা এবং পরে মিলিয়ে বাংলাদেশে সরকারি হিসাবে মোট ১১ লাখ ১৯ হাজার রোহিঙ্গা এসেছে।

তিন বছর আগে উজাড় হওয়া বন গাছপালা পুনরুদ্ধার এবং ন্যাড়া পাহাড়ে বনায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয় গত বছর। আর এ বছর ক্যাম্পগুলোতে বনায়ন কার্যক্রম আরো জোরদার করার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে কক্সবাজারের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন অফিস (আরআরআরসি), বন বিভাগ এবং ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসজিজি) অংশীদার জাতিসংঘের সংস্থা ও এনজিওসমূহ সমন্বিতভাবে এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইইটিউব্লিউজি) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ২০২০ সালের জন্য পৃথিবীর বৃহত্তম শরণার্থী ক্যাম্পে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির প্রভাবে ঝুঁকিপূর্ণ শরণার্থী ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনতে এ বছরের বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম, বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘের সংস্থা ও এনজিওসমূহের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতার অংশ।
গতকাল বুধবার বিকেলে শরণার্থী ক্যাম্পের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের ৪ এক্সটেনশন ক্যাম্পে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, ‘এ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা ক্যাম্পগুলোর মরুময় পরিবেশকে মরুদ্যানে রূপান্তর করব।’

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এ বছর মৌসুমের শেষ দিকে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। ক্যাম্প-ইনচার্জ এবং সাইট ম্যানেজমেন্ট ও সাইট ডেভেলপমেন্ট সেক্টরের সহযোগী ১৫টি সংস্থা (অ্যাকশন এইড, আরণ্যক ফাউন্ডেশন, বিএটি, ব্র্যাক, সিএনআরএস, ডিসিএ, এফএও, এফআইভিডিবি, আইওএম, আইউইসিএন, মুক্তি, আরডিআরএস বাংলাদেশ, শুশীলন, ইউএনএইচসিআর, ডব্লিউএফপির সমন্বয়ের মাধ্যমে ১২০ হেক্টর জমিতে গাছ লাগানো হবে। যা বিগত ২০১৮ ও ২০১৯ সালের রোপণকৃত ৩৫০ হেক্টর জমির সঙ্গে যুক্ত হবে।
মাহবুব আলম তালুকদার জানান, পুরো উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার পরিবেশ ও বন রক্ষার্থে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হবে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন এনজিওসংস্থা বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্যাম্পগুলোতে গত বর্ষা মৌসুমে মোট দুই লাখ চার হাজার ৩০০টি বৃক্ষরোপণ করেছে। এ বছরের বর্ষা মৌসুমে পাঁচ লাখ বৃক্ষরোপণের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।
ইইটিডব্লিউজির কো-অর্ডিনেটর টড ও’চক বলেন, ২০২০ সালের এ বৃক্ষরোপণ পরিকল্পনা পাহাড়ের ঢালে ভাঙন, ভূমিধস এবং পানির গুণগত মানসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাসমূহ এবং সরকারকে সহায়তা করবে।
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ কর্মসূচি চলাকালে কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসমূহ কঠোরভাবে মেনে চলা হবে। এ ছাড়া গাছগুলোর বেঁচে থাকা নিশ্চিত করতে আট মাসব্যাপী রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে সংশ্লিষ্টরা। এ বছরের বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের ক্ষেত্রে জলাশয়ের তীরবর্তী বনভূমি রক্ষা, পাহাড়ের ঢাল সুরক্ষা, সড়কের আশপাশের ভাঙন নিয়ন্ত্রণ এবং দেশজ বৃক্ষপ্রজাতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, যা পরিবেশের ক্ষতি পুনরুদ্ধার করতে সহযোগিতা করবে। এ ছাড়া এটি বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি পরিবারের ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়তা করবে, যারা বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করেন।
আইএসসিজির সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর নিকোল এপটিং বলেন, কক্সবাজার জেলার জীববৈচিত্র্য, বসবাসরত স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও শরাণার্থীর সুরক্ষার পাশাপাশি জমির অবস্থা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে রোহিঙ্গা শরণার্থী সাড়াদানে পরিবেশগত উদ্যোগে অর্থায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।