উচ্ছৃঙ্খলতার চূড়ান্ত রূপ আবরার হত্যা : মনিরুল ইসলাম

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যা উচ্ছৃঙ্খলতার চূড়ান্ত রূপ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বুয়েটের ছাত্ররা জড়িত থাকলেও এরা মূলত উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত ছিল। উচ্ছৃঙ্খল জীবনে প্রবেশ করে রাজনীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন তারা। এরা র্যাগিংয়ের নামে সব সময় হলে একটি আতঙ্কের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রাখত।’
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার মোটিভ হিসেবে এখানে একক কোনো কারণকে দায়ী করা যাচ্ছে না। হত্যার পেছনে একক কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। আবরার শিবির করে কি না, হত্যার পেছনে এটি একটি অন্যতম কারণ হতে পারে। তবে শুধু এই কারণেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে এটা বলা যাবে না। এদের সঙ্গে কেউ দ্বিমত পোষণ করলে, সালাম না দিলে, তাদের সামনে হেসে দিলে অথবা কথা না শুনলে ইত্যাদি কারণে তারা নির্যাতন করত।’
১১ জন সরাসরি হত্যায় অংশ নেয়, স্বীকারোক্তি দিয়েছেন আটজন
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজে ১৯ জনের চেহারা বিভিন্ন পর্যায়ে দেখা গেছে। তবে এই ১৯ জনের ভেতরে সরাসরি আবরারকে মারপিটে অংশগ্রহণ করেন ১১ জন। বাকিরা পরিকল্পনা ও ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত থেকেও পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ ও নির্দেশণা প্রদানের মাধ্যমে এই ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা এসেছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের ভেতরে আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আর যারা আদালতে জবানবন্দি দেননি তারাও পুলিশের কাছে ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।’
২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল, পলাতক চার
অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘মোট ২৫ জনের বিরুদ্ধে আমরা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। এর ভেতরে এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং তদন্তে এই ঘটনায় সম্পৃক্ত পাওয়ায় আরো ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের ভেতরে আমরা ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। এজাহারে নাম থাকা তিনজন পলাতক আছেন। পরবর্তী সময়ে তদন্তে বেরিয়ে আসা ছয়জনের ভেতরে একজন পলাতক আছেন। এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সিসিটিভির যে ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্লেষণ এবং প্রত্যক্ষদর্শী কিংবা অন্যান্যভাবে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণে এই ২৫ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছি।’
অমিত সাহা অন্যতম প্রধান ‘হোতা’
কমিশনার মনিরুল বলেন, ‘অমিত সাহা (বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত উপ-আইন সম্পাদক) ওই দিন (৬ অক্টোবর) ঘটনাস্থলে না থাকলেও এর আগে তাঁকে (আবরার ফাহাদ) ডেকে আনা, তাঁকে শায়েস্তা করার মতো কাজে সে নির্দেশনা দিয়েছে। ঘটনার আগেও সে এই কাজ করেছে। ঘটনার দিনও সে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছে এবং নির্দেশনা দিয়েছে।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘নির্দেশনা এবং পরিকল্পনার সঙ্গে অমিত সাহার সম্পৃক্ত থাকার সাক্ষ্য প্রমাণ আমরা পেয়েছি। সেজন্য তাকে অন্যতম প্রধান অ্যাবেটর (হোতা) হিসেবে ওই ঘটনার সঙ্গে সেভাবেই তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।’
আবরার বেঁচেও যেতে পারতেন
মনিরুল বলেন, ‘ঘটনার দিন রাত ১০টার পর থেকে মোটামুটি তাঁর (আবরার ফাহাদ) ওপর নির্যাতন চালানো শুরু হয়। পরে চিকিৎসক উপস্থিত হয়ে রাত ২টা ৫০ মিনিটে আবরারকে মৃত ঘোষণা করেন। অথচ ফাঁকের এই সময়টার ভেতরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে হয়তো-বা তাঁকে বাঁচানো যেত। আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে। সেই পরিচয়কে তারা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।’