ইভিএমে অল্প সময়ে সহজে ভোট দিলাম : প্রধানমন্ত্রী

ভোট দেওয়ার সময় শুরু হওয়ামাত্রই ভোট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা সিটি কলেজের ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইভিএমের মাধ্যমে আমি ভোট দিলাম। খুব অল্প সময়ের মধ্যে অত্যন্ত সহজে আমি ভোট দিতে পেরেছি। আমি মনে করি, পর্যায়ক্রমে সমগ্র বাংলাদেশে এই ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবে নির্বাচন কমিশন। যাতে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার সুনিশ্চিত হয়। কেউ যেন কারো ভোট কেড়ে নিতে না পারে। ’
ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। আজ শনিবার ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভোটাররা স্বাধীনভাবে যার যার ইচ্ছামতো ভোট দেবে। আমার ভোট আমি দেব, যাকে আমার পছন্দ তাকে দেব। এই নিয়মেই চলবে। ভোটের মধ্য দিয়েই নির্বাচিত প্রতিনিধি জয়যুক্ত করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাপসকে আমি ভোট দিলাম। উত্তরে আতিক আমাদের প্রার্থী। আমি আশা করি, সেও জয়যুক্ত হবে। ইনশাআল্লাহ আমরা জয়ী হয়ে ঢাকা শহরবাসীর জন্য পরিচ্ছন্ন, উন্নত একটা শহর গড়ে তুলব। আপনারা জানেন, আমরা যথাযথ অনেক কর্মসূচি নিয়েছি। বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। সেগুলো আমরা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করব।’
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলব তারা যেন সজাগ থাকেন। যেন প্রতিটি ভোটার শান্তিমতো তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। অর্থাৎ ভোটের অধিকার যেন সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারে। সে পরিবেশটাই আমরা সৃষ্টি করতে চাই। অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি; গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। যার ফলে দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অগ্রযাত্রা শুরু করেছে।’
রাষ্ট্রদূতদের উদ্বেগ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উদ্বেগ তাঁরা প্রকাশ করতে পারেন, কারণ আমাদের অতীত ইতিহাস তো ভালো না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে বাংলাদেশে আমরা দেখেছি কীভাবে মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। সেই হ্যাঁ-না ভোট, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন ভোট, মাগুরা স্টাইলের ভোট, ঢাকা সিটিতেও ১০ আসনের ভোট এ রকম বহু খেলা ছিল। আস্তে আস্তে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়েছি। তাদের উদ্বেগ হওয়ার কিছু নেই; বরং তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তাদের দেশে ভোট কেমন হয় এ রকম কিছু কিছু নমুনা তো আমাদের জানা আছে। তবে একটা কাজ তারা ঠিক করেননি। তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে বাংলাদেশের অনেক নাগরিক চাকরি করে। যারা বাংলাদেশের নাগরিক এবং সেখানে চাকরি করেন, তাদের তারা যে বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে, এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। কারণ তারা বিদেশি হয় কীভাবে? বিদেশি পর্যবেক্ষক হয় কীভাবে? তিনি আরো বলেন, এর মধ্যে অনেক বৈরী লোকও আছে আমি যাদের চিনি। কারো পিতা ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল বা কেউ ছিল স্বাধীনতাবিরোধী যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা চালিয়েছে, যারা মা-বোনদের ইজ্জত লুটেছে, পাকিস্তানি দালালদের সহযোগিতা করেছে তাদেরই উত্তরসূরি। আমি জানি অনেকে রাষ্ট্রদূতদের ওখানে চাকরি করে। তাদের নাম দিয়েছে। এটা সঠিক কাজ করেননি। নির্বাচন কমিশন এটা কীভাবে গ্রহণ করল। কারণ নির্বাচন কমিশনের আইনে স্পষ্ট দেওয়া আছে বিদেশি পর্যবেক্ষক মানে বিদেশি হতে হবে। এটা গ্রহণ করে ঠিক করেননি।’
বিএনপির অভিযোগের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে। ভোট চুরি ভোট ডাকাতি এ দেশে শুরুই করেছিল তারা।’ তিনি আরো বলেন, ‘তারা গুণ্ডাবাহিনী আনবে, সন্ত্রাসী আনবে এটা তাদের চরিত্রগত অভ্যাস। কারণ জনগণের ওপর তারা কিছুতেই আস্থা রাখতে পারে না। ডিজিটাল পদ্ধতির ওপর তারা আস্থা রাখতে পারে না। কারণ তারা জানে এ পদ্ধতিতে ভোট কারচুপি করা কঠিন। কারচুপি করার সুযোগ না পেলেই তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে চায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ পথ পরিহার করে জনগণের আস্থা অর্জনে সচেষ্ট হতে বলব। জনগণের আস্থা বিশ্বাসই মূল শক্তি। সেই শক্তি নিয়ে আওয়ামী লীগ পরপর তিনবার সর্বসাকল্যে চারবার ক্ষমতায় এসেছে। যার ফলাফল দেশের মানুষ পাচ্ছে। মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে।’