Skip to main content
NTV Online

শিল্প ও সাহিত্য

শিল্প ও সাহিত্য
  • অ ফ A
  • গদ্য
  • কবিতা
  • সাক্ষাৎকার
  • গ্রন্থ আলোচনা
  • বইমেলা
  • চিত্রকলা
  • শিল্পসাহিত্যের খবর
  • পুরস্কার ও অনুষ্ঠান
  • চলচ্চিত্র
  • আলোকচিত্র
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
Follow
  • শিল্প ও সাহিত্য
ছবি

দেশে দেশে ঈদুল আজহা উদযাপন

‘কনকা সেরা পরিবার’ সিজন- ৩ চ্যাম্পিয়ন ঢাকার শাহিদিন-ফারহানা পরিবার

কোহলির স্বপ্নজয়ে সারথি আনুশকা!

প্রকৃতিপ্রেমী বুবলী

ইউরোপের রাজাদের বিজয় উদযাপন

স্মার্ট লুকে কেয়া পায়েল

বর্ণিল আয়োজনে ‘মার্সেল হা-শো’ গ্র্যান্ড ফিনাল

জাপানে প্রধান উপদেষ্টা

কানে নজরকাড়া লুকে জাহ্নবী কাপুর

বর্ণিল সাজে সেমন্তী সৌমি

ভিডিও
এ লগন গান শোনাবার : পর্ব ২০৫
এ লগন গান শোনাবার : পর্ব ২০৫
এক্সপার্ট টুডেস কিচেন : পর্ব ৩০১
এক্সপার্ট টুডেস কিচেন : পর্ব ৩০১
ছাত্রাবাঁশ : পর্ব ১৪
ছাত্রাবাঁশ : পর্ব ১৪
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৫২
জোনাকির আলো : পর্ব ১২৪
স্বাস্থ্য প্রতিদিন : পর্ব ৫৫৩৮
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
মহিলাঙ্গন : পর্ব ৩৬১
মহিলাঙ্গন : পর্ব ৩৬১
আলোকপাত : পর্ব ৭৭৬
এই সময় : পর্ব ৩৮২৮
এই সময় : পর্ব ৩৮২৮
শেখ সাইফুর রহমান
১৬:৪৩, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬
আপডেট: ১৭:৩৮, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬
শেখ সাইফুর রহমান
১৬:৪৩, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬
আপডেট: ১৭:৩৮, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬
আরও খবর
ডালাস বাংলা চলচ্চিত্র উৎসব ৪-৬ আগস্ট
‘মাইক’ চলচ্চিত্রটি ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে : হানিফ
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা উঠল
সিলেট চলচ্চিত্র উৎসবে ৩ হাজারের বেশি চলচ্চিত্র জমা
সিনেমার ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে...

আমি সুচিত্রা আমিই ইন্ডাস্ট্রি

শেখ সাইফুর রহমান
১৬:৪৩, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬
আপডেট: ১৭:৩৮, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬
শেখ সাইফুর রহমান
১৬:৪৩, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬
আপডেট: ১৭:৩৮, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬

মকবুল ফিদা হুসেন। রহস্যপুরুষ। তাঁর নারীরাও। ক্যানভাসে তাঁর আবেগজারণে, তুলির টানে প্রাণ পেয়েছে তিন নারীমুখ। তিন প্রজন্মের। ভারতীয় ছায়াছবির। টাবু, মাধুরী দীক্ষিত ও সুচিত্রা সেন। রহস্যাভরণে অনন্য ত্রয়ী। শেষোক্ত জন আদ্যন্ত। সবার ওপরে। তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য হা-পিত্যেশ কত মসিজীবীর। অথচ দেখুন, কত সহজেই ঢোকা গেছে তাঁর অন্দরমহলে। তখন তিনি প্রৌঢ়া, কিন্তু বাঙালির মনে তরুণীই হয়ে আছেন। কল্পনা কিংবা অবচেতনের গহন এলাকা ছাড়া আর কোথায়ই বা তাঁর দেখা পাওয়া সম্ভব? এটা আর কিছু নয় সেই স্বপ্নসম্ভব আলাপচারিতার লিপিরূপ মাত্র।

বেদান্ত। ৫২/৪/১ বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড। বালিগঞ্জ ফাঁড়ি স্টপে নেমে হাঁটা পথ। বহুতল অট্টালিকা। আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে। দেখে এলেম তাঁকে। শুধুই কি দেখা? হলো কত কথাও। অবশ্য তাঁর কাছে পৌঁছানোটা চাট্টিখানি কথা নয়। নিচে একপ্রস্থ পরিচয়পর্ব উতরে জায়গামতো ওঠা। সেখানে আবার ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় আপাদমস্তক নিরীক্ষণ। তারপর প্রবেশ-অনুমতি। কাজের লোকটির উত্তরের মতো করে জিজ্ঞাসা- মায়ের দেশ থেকে এসেছেন। তা বেশ। বসুন। মা ঠাকুরঘরে। আসবে এখন।

বাহুল্যবর্জিত অন্দরমহল। তাঁর অন্তরমহলের মতোই। একটা-দুটো ছবি দেয়ালে। মেয়ে, নাতনিদের। নিজের উপস্থিতি ফ্রেমবন্দি নয়।

(একটু পরে শোনা গেল) কে এসেছে রে?

-বাংলাদেশের একজন সাংবাদিক।

বসিয়েছিস ঠিকমতো? আমি আসছি।

আরো মিনিট পাঁচেক।

তারপর যাঁর আগমন, তাঁর জন্য আজো আকুল বাঙালি হৃদয়। আজকের ডিজিটাল-তনয়দের এক্সাইটমেন্ট কতটা উদগ্র জানি না; তবে আমি বা আমার অগ্রজপ্রজন্মের বিহ্বলতা অপরিমেয়।

দাঁড়িয়ে নমস্কার করি। কুশলবিনিময় হয়।

-বলেন, আপনি তো বেশ সময়সচেতন। ঠিকমতোই এসেছেন। আমারই বরং কয়েক মিনিট বিলম্ব হলো।

বিনয়ে বিগলিত আমি। জানতে চান, কতক্ষণ কথা বলব? বলি, আধা ঘণ্টা।

-শেষ হবে তো? (আলগোছে আমার হাতের প্রশ্নের প্রিন্টটা দেখে) প্রশ্ন তো অনেক মনে হচ্ছে!

দেখা যাক। শুরু তো করি। তবে আপনি নয়, তুমিতেই স্বচ্ছন্দ হই।

-তা, বাংলাদেশে কোথায় থাকা হয়?

ঢাকায়। গিয়েছেন কখনো?

-না।

ইচ্ছে হয়নি?

-সব ইচ্ছে পূরণ হয়?

আপনার দাদাশ্বশুরের নামে একটা রাস্তা এখনো আছে। দীননাথ সেন স্ট্রিট। ওটা এখন পুরান ঢাকা।

-তাই নাকি?

হুঁ। উনি তো একসময় ত্রিপুরার মন্ত্রী হয়েছিলেন বন্ধু তথা আধুনিক ত্রিপুরার রূপকার বীরচন্দ্রের অনুরোধে। এক বছর ছিলেন। তারপর চলে আসেন। শিক্ষানুরাগী। মন্ত্রিত্ব ভালো লাগেনি। উনি ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জের মানুষ। তাঁর বেশ ক’টি বই পাঠ্য ছিল। এ ছাড়া আসামের সংক্ষিপ্ত বিবরণ আর সঙ্গীত নিয়েও বই লিখেছেন।

(দীননাথ সেন আবার বাংলা সিনেমার পথিকৃৎ হীরালাল সেনের বাবা চন্দ্রমোহন সেনের বড় ভাই)

-অনেক খবর রাখা হয় দেখছি।

আমি হাসি। ভেবে পাই না কোথা থেকে শুরু করব আসল কথোপকথন। কুণ্ঠা ঝেড়ে ফেলে প্রশ্ন করি, অলৌকিকে বিশ্বাস করেন?

-না।

কিন্তু সেই ছেলেবেলার নাগা সন্ন্যাসীর যে ভবিষ্যদ্বাণী? পাটনায়? আপনার মামাবাড়িতে? সেটা তো ফলেছে?

বিষয়টাকে তো আপনি বিভিন্ন সময় এনডোর্সও করেছেন?

-তাই নাকি? তাহলে কি বলতে চাও, রমার সুচিত্রা হয়ে ওঠায় কোনো কৃতিত্ব ব্যক্তি আমির নেই?

না, তা আমি একবারও বলিনি। আচ্ছা, তর্ক নয়; বরং একটা কথা জানতে ইচ্ছে করছে।

-কী সেটা?

সেই যে আপনি তখন ক্লাস নাইন। পাবনা গার্লস স্কুল। একদিন টিফিনের সময় হাই বেঞ্চে বসে বন্ধুদের বলেছিলেন, দেখিস, একদিন আমি এমন একটা কিছু করব, যা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

-হ্যাঁ, বলেছিলুম তো।

কিন্তু ওটা কেন মনে হয়েছিল? এতটা আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে পেয়েছিলেন তখন?

-তা তো ঠিক জানি না। এত বছর পরে বলাও সম্ভব নয়।

তাহলে কি বলা যায়, এর পেছনেও ওই নাগাবাবা অনুঘটক হয়েছিলেন? আপনার মনে পুরে দিয়েছিলেন আত্মবিশ্বাস।

-তুমি বাপু নাগাবাবাকে নিয়েই পড়লে। (সেই হৃদয়ভেদী হাসি)

ওহ্। ভুলেই গেছি। দেখ, আমি বাঙাল অথচ আতিথেয়তা করছি না। দেশের মানুষ। বদনাম হবে না? বলো, কী খাবে? এখানে ভালো শিঙাড়া পাওয়া যায়। কাটলেটও। এই, যা তো, নিয়ে আয়। চা খাবে তো? সাংবাদিক আবার চা খাবে না, তা কি হয়? সিগারেট?

চা দুধ ছাড়া। তবে শেষেরটা নয়।

-না, আমাকে সংকোচ করার কিছু নেই। আমিও একসময়…

জানি। তবে আমি খাই না।

-সাংবাদিক হয়েও খাও না?

না।

-বেশ তো। তবে আমারটা কীভাবে জানলে?

পড়ে। এখনো কি…?

-না। একদম নয়।

অথচ একসময় সেটে আপনি প্রকাশ্যে ধূমপান করেছেন।

-হ্যাঁ, তা বটে। কী কাণ্ড বলো! এখন ভাবলে হাসি পায়। তবে তোমাদের উত্তমকুমার কিন্তু আমার বড় একটা উপকার করেছেন।

-সেটা কেমন?

-ওই যে প্রকাশ্যে ধূমপান না করার পরামর্শটা তো ওরই দেওয়া।

আপনার দুঃসাহস নিয়ে অনেক কথা শোনার আছে। তার আগে কি অলৌকিকতা নিয়ে আরো একটা প্রশ্ন করতে পারি?

-কী জানতে চাও, বলো।

ধর্মের সঙ্গে অলৌকিকতার তো বেশ একটা গাঁটছড়া আছে। সব ধর্মেই। আপনি কি সেটা বিশ্বাস করেন? মানেন?

-(কিছুটা দ্বন্দ্বে পড়লেন মনে হলো) একটু ভেবে নিয়ে বললেন, আমি ঠিক ওভাবে ভাবতে চাই না। বরং আমার কাছে ধর্ম হলো ভক্তির, শ্রদ্ধার, সমর্পণের।

হুঁ। চমৎকার ব্যাখ্যা।

আচ্ছা, সাংবাদিকদের সঙ্গে আপনার খটামটি বলতে গেলে আপনার ক্যারিয়ারের সেই শুরু থেকেই। কালীশ ব্যানার্জি দিয়ে। তাঁর পত্রিকাটা তো বন্ধ করেই ছেড়েছিলেন। এটা কি কম দুঃসাহস নয়!

-দুঃসাহস কি না জানি না। তবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি মাত্র।

আচ্ছা, এক সাংবাদিক, তিনি আপনার মেয়ের বন্ধুও বটে, আপনার সাক্ষাৎকার নিতে না পেরে প্রেমপত্র লিখতেন। তাঁর লেখা আমার নিজেরও ভীষণ প্রিয়।

-কে? রঞ্জনের (রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়) কথা বলছ?

হ্যাঁ।

-এটা ওর পাগলামি আরকি! ওটা করে কী হলো বলো? পারল কি, যা চেয়েছিল?

ধরে ফেললেন কী করে?

-আরে বাবা, ওর ল্যাঙ্গুয়েজটা কি আমি চিনি না?

অথচ দেখুন, দুজন সাংবাদিকের সঙ্গে তো আপনার দারুণ অন্তরঙ্গতা ছিল। বন্ধু হয়ে গিয়েছিল। ঘরের মানুষ। ভরসারও।

-তা যা বলেছ। অমিতাভ (অমিতাভ চৌধুরী) আর গোপাল (গোপালকৃষ্ণ রায়)। সত্যিই ওরা আমার ভালো বন্ধু।

আমার দৃষ্টি একটু অন্যদিকে। তাঁর স্যান্ডেলটা দেখছি।

-হঠাৎ প্রশ্ন। কী দেখছ ওদিকটায়?

আপনার স্যান্ডেল। বেশ সুন্দর। এটা দেখে আমার পুরনো একটা কথা মনে পড়ে গেল।

-কী সেটা?

বাটার বিজ্ঞাপন। ওই একটিতেই তো আপনি পণ্যদূত হয়েছিলেন। ষাটের দশকে।

-তা বেশ বলেছ, পণ্যদূত। হ্যাঁ। বাটার স্যান্ডেলের। মানুষ বেশ পছন্দ করেছিল।

তাহলে পরে আর করেননি কেন?

-বিষয়টা সেভাবে টানেনি।

বাটা আর অনুরোধ করেনি?

-করেনি আবার। শুধু ওরা কেন, অনেকেই তো করেছে। আমি রাজি হইনি।

জীবনে এমন অনেক কিছু আছে, আপনি রাজি হননি। সে পাল্লাটা তো ভারী। তাই নয় কি?

-তা যা বলেছ। তাতে আমার খেদ নেই বাপু।

খেদের প্রসঙ্গ এলোই যখন…। আপনি অন্তত একবার থিয়েটার করতে চেয়েছিলেন। বিশেষত শেষের দিকে আপনি চতুরঙ্গর ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন।

-সত্যিই তাই। এটা একটা অপূর্ণতা। থিয়েটার না করা। তবে চতুরঙ্গের ব্যাপারে আগ্রহের কারণ হলো, গল্পটি নিয়ে পূর্ণেন্দু পত্রীর পরিচালনায় সিনেমার শুটিং শুরু হয়েছিল। কিন্তু শেষ হয়নি।

সিঙ্গিং অ্যাকট্রেসও তো হতে চেয়েছিলেন? কিন্তু কেন হলো না?

-আমার কণ্ঠের মাধুর্যের চেয়ে রূপের মাধুর্যেই যে সবাই মজে গেল। আমিও কাজে ডুবে গেলুম। যা হয় আরকি। গানে সময় দেওয়া হলো না।

তার জন্য খেদ নেই?

-এটার জন্য আছে বৈকি। সুরাইয়া, কিশোর কুমার, কানন দেবীদের উত্তরসূরি হতে না পারার কষ্টটা থেকেই গেল।

সে খেদ কি কেবল আপনার? সব বাঙালিরও। তবে কিন্তু রুপালি পর্দায় আপনাকে বাঙালি যে পেয়েছে, সেটাই বা কম কী? বাংলাদেশের একজন সাহিত্যিক, হুমায়ুন আজাদ। কি বলেছেন, জানেন?

-কী?

বলেছেন, উত্তম একজন মেরুদণ্ডহীন নায়ক। তাঁর প্রতিটি সিনেমায় মনে হয়, সুচিত্রা সেনের চরিত্রটিই যেন তাঁর অভিনীত চরিত্রটাকে ঠেলে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। নায়করূপী উত্তম কোনো বিষয়ে দৃঢ়ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, বিপদে পড়লে তোতলাতে থাকেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুচিত্রা অভিনীত চরিত্রের শরণাপন্ন হতে হয়।

তাঁর এ বক্তব্য মানেন?

-না, ওভাবে বলো না। এখানে তো চিত্রনাট্য একটা ফ্যাক্টর। উনিও যথেষ্ট বড় মাপের অভিনেতা। আমাদের দুজনেরই অবদান রয়েছে।

আপনারা দুজনে তো অসম্ভব ভালো বন্ধুও। কিংবা বলি আরো বেশি কিছু। আপনি যে সরে যাবেন গ্ল্যামারের আলো থেকে, সেটা তো তাঁকেই সবার আগে বলেছিলেন।

-ঠিক তাই।

আবার চরম দাম্পত্য কলহের জেরে ঘরছাড়া হলে তো তিনি আপনার কাছেই এসেছেন সবার আগে, আশ্রয়ের জন্য।

-হ্যাঁ, সেটাও ঠিক।

কিন্তু…

-কিন্তু কী? আমি আশ্রয় হতে পারিনি? কেন পারিনি, সেটা বুঝবে না।

আপনি তো বলেন ভালো বন্ধু। কিন্তু মন উচাটন হয়নি কখনো?

-হাসেন (সে হাসি ইন্দ্রধনু হয়ে ছড়িয়ে যায়)।

উত্তমবাবু তো ইন্টারভিউতে খোদ রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেছেন যে সেটা হবে না আবার।

-বলতেই পারে। সেটা ওর নিজস্ব অভিমত।

অথচ এই বন্ধুর সঙ্গে আপনার একটা সময়ে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বেশ ভালো মতোই। সপ্তপদী ছবির সময়ে সেটা তুঙ্গে ছিল। ছবিটার মাঝপথে আপনি হঠাৎ বম্বে চলে যান। ফিরে এসে কাজ করলেও মাঝেমধ্যে বন্ধ করে দিয়েছেন। ডেসডিমোনার পাঠ জেনিফার কাপুর বলুক, আপনি চাননি। এ জন্য তিন মাস শুট বন্ধ ছিল।

-এসবই ঠিক।

আপনি কেন জেদ করেছিলেন ডেসডিমোনার ডায়ালগ বলার জন্য?

-আমার আত্মবিশ্বাস ধাক্কা খাক, চাইনি।

শেষ পর্যন্ত তো রাজি হলেন?

-হ্যাঁ, ছবিটা শেষ করার তাগিদ থেকেই। আফটার অল শিল্পী তো। তা ছাড়া প্রযোজক যে সে!

অথচ ছবিটা কী অসাধারণ! আপনি সত্যিই ছাপিয়ে গেছেন উত্তমকুমারকে।

-তা বলছ?

নয়তো কী? এ ছবি বোদ্ধারা বলছেন, বাঙালি নারীর নবজন্মের প্রতীক। ম্যাজিক রিয়েলিজম! মাতাল নারী এর আগে বাঙালি দেখেছে কি রুপালি পর্দায়? বিশেষত নায়িকা?

আচ্ছা, সংঘাত কি আসলে ছবিটাকে অন্য মাত্রায় উন্নীত করতে সহায়ক হয়েছে? একে অন্যের প্রতি বিতৃষ্ণা, জেদ, ক্ষোভ, ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব?

-হতে পারে।

একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি কিন্তু সাত পাকে বাঁধাতেও দেখি। যেদিন সকালে আপনি রাগে দিবানাথবাবুর শার্ট ছিঁড়ে দিয়ে স্টুডিওতে গিয়েছিলেন, সেদিনই তো আপনার নায়ক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পাঞ্জাবিও ছিঁড়েছেন অভিনয়ে। আর ওই আইডিয়াটাও তো আপনার ছিল।

-হ্যাঁ। ঠিক তাই। আসলে ছবি তো জীবনের বাইরে নয়।

আচ্ছা, সাত পাকে বাঁধা আন্তর্জাতিক খ্যাতি দিয়েছে। অথচ উত্তমকুমারের সঙ্গে আপনার কোনো ছবি স্বীকৃতি আদায় করতে পারেনি কেন?

-এটা আয়রনি বলতে পারো। পরিচালকরাই পাঠায়নি। আর স্বীকৃতি নিয়ে আমরা দুজনে কেউই তো মাথা ঘামাইনি।

গ্রেটা গার্বোর সঙ্গে আপনার নানান তুলনা করা হয়। আপনি কি তুল্য হতে বিচলিত হন?

-না, তা কেন? অত বড় মাপের অভিনেত্রী। তুলনা হতেই পারে।

অথচ দেখুন, আপনার প্রিয় অভিনেত্রী কিন্তু তিনি নন; বরং লিজ টেলর।

-তা যা বলেছ। আমরা বলতে গেলে সমসময়ের। অথচ তাকে আমি অনেক অনুসরণ করেছি। তার প্রথম কোনো ছবি দেখি ‘দেয়ার ইজ ওয়ান বর্ন এভরি মোমেন্ট’। পুরুষদের মধ্যে কাকে ভালো লাগত জানো? মার্লোন ব্র্যান্ডো।

হিন্দি সিনেমায় সঞ্জীবকুমার ও নার্গিস। তাই না?

হ্যাঁ। সঞ্জীবকুমার আমার আরেক কাছের মানুষ। ভালো বন্ধু। এত কম বয়সে চলে গেল। (দীর্ঘশ্বাস লুকাতে পারেন না)

আপনার সিনেমায় আসার কাহিনী বলতে গেলে ক্লিশে। সে প্রসঙ্গে না যাই, বরং বাংলা ছায়াছবিতে আপনার ধূমকেতুর মতো আগমন নিয়ে কথা বলা যাক।

বলা হয়, বাংলা ছবিতে আধুনিক স্মার্টনেস আর গতি এনেছেন আপনি। নারী সর্বংসহা নয়, প্রতিবাদী। সেটা দেখিয়েছেন। নারী শিল্পীর প্রতি অবজ্ঞা, সেটা আপনি দূর করেছেন আপনার অনমনীয় ব্যক্তিতের দাপটে। এক কথায় বলতে গেলে পুরুষশাসিত সমাজে নায়িকাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আপনি। সেটে নাম ধরে নয়, সমীহ করেই আপনাকে ম্যাডাম বা মিসেস সেন বলে ডাকতে বাধ্য করেছেন। আপনার ভয়ে সেটে নাকি সবাই তটস্থ থাকত।

-যেসব প্রশংসা করা হচ্ছে, তার আমি কতটুকু যোগ্য জানি না। তবে নারীর অধিকার আদায়ের লড়াইটা আমি করেছি। কিছুটা যে সফল হয়েছি, সেটা বলতে পারি। আসলে এর প্রয়োজনও ছিল। না হলে নিজেকে গুছিয়ে রাখতে পারতুম না।

পছন্দ না করলেও অনেক নারী সহশিল্পী আপনাকে এ কারণে কুর্নিশ করেছে।

-হতে পারে।

কানন দেবী, ছায়া দেবীর মতো শিল্পীরাও আপনাকে আশীর্বাদ করেছেন।

-সেটা জানি। এ জন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়।

তবে প্রতিবাদী নারী, অ্যাংরি ইয়াং উইম্যান…যাই বলা হোক না কেন, আপনি কিন্তু বাংলা ছবির প্রথম সত্যিকারের সুপারস্টার। আপনাকে নিয়ে এক লেখকের উপমা ‘চিত্র-চন্দ্রমা’।

আচ্ছা, এমন কি কখনো মনে হয়েছে ‘আমি সুচিত্রা। আমিই ইন্ডাস্ট্রি!

(হাসেন। ঠোঁট ছুঁয়ে থাকে তার মৃদু বিচ্ছুরণ)

বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক বলেছেন, আপনি নাকি তাঁর প্রথম প্রেম। এটা তাঁর স্ত্রীও জানেন। আর আপনি ওই সময়ে যেটা করেছেন, অন অ্যান্ড অফ স্ক্রিন, সেটা নারী স্বাধীনতার জন্য বিশেষ গুরুত্ববহ।

-আমি চেষ্টা করেছি। উইথ সিনসিয়ারিটি।

তিনি আরো একটা মজার কথা বলেছেন। উত্তম-সুচিত্রা জুটিই (হাসতে হাসতে উত্তম-সুচিত্রা নয়, বলো সুচিত্রা-উত্তম) প্রেমের ট্যাবুর শাপমোচন করেছেন। বৈধতা দিয়েছেন ভদ্রঘরের বাঙালি ছেলে ও মেয়েদের জন্য। তারা একটু সাহস পেয়েছে।

-হাসলেন একচোট। তারপর বললেন, এটা তুমি ঠিকই বলেছ।

আপাতত গাম্ভীর্যের আড়ালে আপনি তো আবার দারুণ আমুদে মানুষ। প্রিয় বান্ধবীর সেটে উত্তমকুমারকে জড়িয়ে ধরে সুপ্রিয়া দেবীকে একটু জেলাস করতে চেয়েছিলেন।

-হাসতে হাসতে… ও এই কথা! এটা একটু মজা করা আরকি। বেনু ভালো মেয়ে। ও জানে আমার আর উতুর সম্পর্ক। তাই রাগ করার প্রশ্নই ওঠে না। না হলে আমি কি একদিন ওকে ফোন করে বলতে পারতুম, উতুকে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে?

অথচ উত্তমকুমারের সঙ্গে মনোমালিন্যও হয়েছে?

-শোনো, সম্পর্ক গভীর হলেই না এটা হয়। কারণ, প্রত্যাশার পারাটা ঊর্ধ্বগামী থাকে। তাই টানাপড়েন আসতেই পারে।

এই সম্পর্কটাকে আপনি নিভৃত যতনে রেখেছেন? সে জন্যই কি বন্ধুর মৃত্যু আপনাকে বিদীর্ণ করেছে? সারা দিন নিস্তব্ধ বসে থেকে মাঝরাতে শেষ সাক্ষাতে গেছেন?

-এসব বড্ড কঠিন প্রশ্ন হয়ে যাচ্ছে। অন্য সময় অন্য সাংবাদিক হলে বকুনি দিতুম।

আমি কিন্তু উত্তরটা পাইনি।

-সব উত্তর পেতে হয় না। পাওয়া যায় না।

আচ্ছা, উত্তমকুমারকে সত্যিই ফেরানো গেলে আপনি এই অন্তরালবাস ছেড়ে বেরিয়ে আসতেন?

-হুম্…। বুড়োকে (তরুণকুমার) অবশ্য সেটা আমি বলেও ছিলুম।

যাক গে…। এবার অন্য প্রসঙ্গে। অন্যধারার পরিচালকদের সঙ্গে আপনার কাজ করা হয়ে ওঠেনি। ঋত্বিক ঘটক আপনার সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলেন। সত্যজিৎ রায়ও।

-ঋত্বিকদার বিষয়টা আলাদা। উনি পেরে ওঠেননি। দুর্ভাগ্য হিসেবেই মেনে নিতে হয়। কিন্তু সত্যজিৎ বাবুর সঙ্গে কাজ করা সম্ভব ছিল। উনি একটু চেষ্টা করলেই পারতেন।

কারণ, যারা আমাকে সুচিত্রা করেছে তাদের বিমুখ করা সম্ভব নয়। আমি ওঁর কাজ ওঁর মতো করেই করে দিতুম। কিন্তু এক্সক্লুসিভ হওয়া সম্ভব ছিল না। উনি মানতে পারলেন না।

-তাই বুঝি প্রযোজক আর ডি বনশালের মুখের ওপর অ্যাগ্রিমেন্টের কাগজটা ছুড়ে ফেলে দিলেন?

-হ্যাঁ। এক্সক্লুসিভ শব্দটা দেখেই মাথায় রক্ত চড়ে গিয়েছিল।

রাজকাপুরকেও তো প্রত্যাখ্যান করেছেন।

-হ্যাঁ। অমন পুরুষ মানুষ আমার অপছন্দ, যে মেয়েদের পায়ের কাছে বসে ছবি করার প্রস্তাব দেয়। কোনো ব্যক্তিত্ব নেই।

ঋত্বিক ঘটকের প্রতি আপনার যে শ্রদ্ধা, তা নজিরবিহীন। তিনি যখন হাসপাতালে, আপনি নিয়মিত দেখতে গেছেন। খাবার নিয়ে গেছেন।

-এটা কিছু নয়। তাঁর মতো শিল্পী বিরলপ্রজ, ক্ষণজন্মা। এটুকু না করতে পারলে আমি শিল্পী কেন?

আবহাওয়াটা ভারী হয়ে যাচ্ছে। একটু হালকা করা যাক।

-তুমি কিন্তু বেশ চালাক ছেলে। আধা ঘণ্টা অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে। অথচ তোমার ভাবলেশ নেই।

আমি হাসি। কারণ, সেটা তো আমি জানি। তাঁকে কথার জালে জড়িয়ে ফেলা গেছে।

আসলে এখনো তো অনেক কথা বাকি। আপনার গ্ল্যামার, ফ্যাশন, লাইফস্টাইল নিয়ে তো কথাই হলো না।

-তোমার সঙ্গে কথা বলতে মন্দ লাগছে না। চলো, আর এক কাপ করে চা খাওয়া যাক। আপত্তি নেই তো?

আপনি কি জানেন, এক ছেলে অগ্নিপরীক্ষার তাপসীর ছবিকে বিয়ে করে আর সারা জীবন বিয়েই করল না?

-তাই নাকি? শুনেছিলুম মনে হয়। কী কাণ্ড বলো!

আচ্ছা, আপনি তো বোম্বেতে থেকেও যেতে পারতেন। থাকলেন না কেন?

-আমি চাইনি। বাংলা ছবিতে আমি নিজেকে মেলে ধরতে চেয়েছি।

ছায়াছবির বাইরে তবে বোম্বে কিন্তু স্মরণীয় হয়ে আছে ধীরেন দেবের জন্য। যেসব ছবি উনি তুলেছেন! আপনিও অবশ্য কিছুটা আশকারা দিয়েছেন।

-ওর কথা আর বোলো না। আমি ওকে না বলতে পারি না। অদ্ভুত ছেলে। আমি ছবি করা বন্ধ করে দিলুম বলে ও ক্যামেরা তুলে রাখল। কী পাগলামো।

-ওর বিদঘুটে বায়না। সমুদ্রের ঢেউয়ে আমায় সুইমিং কস্টিউম পরে দাঁড়াতে হবে। কেবল ওর ক্যামেরার জন্য।

এত খোলামেলা পোশাকে অস্বচ্ছন্দ হননি?

-না। ছুঁৎমার্গ আমার নেই।

অবশ্য আপনি নানা ধরনের পোশাকই পরেছেন। চুড়িদার-কামিজ, সালোয়ার-কামিজ, স্কার্ট-টপস, প্যান্ট-শার্ট, হট প্যান্ট-টপস, গাউন, ফ্রক এমনকি জিন্সও।

এ ছাড়া ফটোশুটে তো আরো অনেক ধরনের পোশাক পরেছেন স্বচ্ছন্দে।

-সিনেমায় সব ধরনের পোশাকের প্রয়োজন হতো না। তাই ফটোশুটে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করেছি।

তাঁতের শাড়িই আমার প্রিয়। টাঙ্গাইল, ঢাকাই। তবে পোশাক হিসেবে সালোয়ার-কামিজই আমার বিশেষ পছন্দের।

ডিজাইন তো করে দিতেন আপনার দর্জি?

-হ্যাঁ।

ব্লাউজও তো পরেছেন নানা ধরনের। এই বৈচিত্র্য উল্লেখের দাবি রাখে।

-হ্যাঁ, তা পরেছি। থ্রি-কোয়ার্টার হাতা, ম্যাগি হাতা, হাফ হাতা, স্লিভলেস, খুব সাহসী লো-কাট, শার্ট কলার, ক্রুকাট।

ব্লাউজ প্রসঙ্গে একটা কথা মনে পড়ে গেল। সব ব্যাপারে আপনি কী ভীষণ খুঁতখুঁতে!

-কোনটা, বলো তো?

ওই যে দীপ জ্বেলে যাই-এর শুটিংয়ে। রঙিন ব্লাউজ ছিল না বলে সাদা ব্লাউজ চায়ে চুবিয়ে শুকিয়ে নিয়ে পরেছিলেন।

হাসলেন একচোট। প্রাণ খোলা হাসি।

বললেন, সবকিছুই নিখুঁত হওয়া চাই। সেটাই তো প্রফেশনালিজম।

আপনার কাচের চুড়ি তো কিংবদন্তি হয়ে আছে।

-তা যা-ই বলো, এটা আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতার জায়গা। প্রিয় উপহার বলতেই তো কাচের চুড়ি। কত মানুষ যে আমাকে এনে দিয়েছে!

আপনার ফ্যাশন অ্যাকসেসরিজের ঝাঁপিটা কি খোলা যায়?

-জুতোর শখ ছিল। ছিলও অনেক।

গাড়ির সিটের নিচে রাখতেন। এটা কেন?

-ইচ্ছেমতো পরে নেওয়া যেত।

আর রোলেক্স ঘড়ি?

হ্যাঁ, সেটা ছিল।

গোপালকৃষ্ণবাবুকে দিয়েও দিয়েছিলেন। তাই না?

-হ্যাঁ, ও তো নিল না।

পথে হলো দেরিতে নাইলন শাড়ি পরলেন। সেই প্রথম। ছায়াছবিটাও রঙিন। কেমন সে অভিজ্ঞতা?

-বেশ।

সেটাই তো তখন বঙ্গতনয়াদের ফ্যাশন ট্রেন্ড হয়ে গেল। যেমন আপনার ক্রুকাট ব্লাউজ। যাকে বলে স্টাইল স্টেটমেন্ট। বাঙালি মেয়েরা এখন তো মুম্বাইফিদা। অথচ তখন সেটা ছিল না। তাদের ফ্যাশন ট্রেন্ড তৈরি হতো আপনাকে দেখে। সম্পূর্ণ সুচিত্রানুসরণ।

-আমি নিজের মতো করে চলার চেষ্টা করেছি। নিজেকে জানি বলেই কী করলে ভালো হবে সেটা বুঝি। তবে এর সঙ্গে হেয়ারড্রেসার, মেকআপ আর্টিস্টের ভূমিকাও ছিল। পোশাক আর গয়না আমি নিজেই ঠিক করেছি চরিত্রের প্রয়োজন বুঝে। মানুষের ভালো লেগেছে। আমি কখনোই অতিরঞ্জনে বিশ্বাসী নই। এ ছাড়া চড়া মেকআপ আমার কখনোই পছন্দ ছিল না। প্রথম দিকে সরু করে ভ্রু এঁকেছি। পরে মোটা করে। লিপস্টিক দিয়েছি গাঢ় করে। চরিত্রের বৈশিষ্ট্য আর প্রয়োজন বুঝেই আমি চুল সেট করে নিতুম। গোষ্ঠকুমার এবং পরে অসিত সেন স্টাইলিং করে দিতেন। মেকআপ করতেন জামান।

বোল্ড আই মেকআপই তো আপনার প্রিয়?

-হ্যাঁ, তা ঠিক। তবে পরিমিতি সব সময়ই ছিল।

নিজেকে পরিপাটি করে রাখায় আপনার জুড়ি নেই। অন্তত সেই সময়ে যখন এত রূপসদন-নির্ভরতা ছিল না। আপনি চুল কাটাতে যেতেন জুন টমিকিন্সে। নিয়মিত।

-এত খবর তুমি পেলে কী করে হে? তুমি তো সেদিনের ছেলে।

যতটা ভাবছেন ততটা নই।

আর আপনার দীঘল কেশরাজি। তার ছায়ায় কত তরুণ আশ্রয় খুঁজেছে। স্বপ্নে, জাগরণে।

-আমার চুল অবশ্য যথেষ্টই ছিল। এখন কমেছে।

সিনেমার পোশাক?

-গাড়িতেই থাকত অন্তত ২০টা। সেখান থেকে দৃশ্য অনুযায়ী বেছে নিতুম।

গো গো সানগ্লাস? ওভারসাইজড।

-এটা আমার বর্ম বলতে পারো। তোমাদের হাজারো চোখকে ফাঁকি দেই এই সানগ্লাসে।

যত দূর জানি, আপনার খুব প্রিয় থাই আর চায়নিজ খাবার। ট্যাংরার একটা রেস্তোরাঁ থেকে আসত। এখনো কি?

-সেভাবে নয়। যা-ই বলো, চায়নিজ আর থাই কুজিন আমার প্রিয়। তবে বাংলাদেশের মেয়ে মাছ খাবে না, তা হয়? চিংড়ি আর ভেটকি আমার পছন্দের।

পদ্মাপারের মেয়ে। ইলিশ নয় তা বলে?

-হাসেন।

-মাংসও খাই। চিকেনটাই বেশি পছন্দ। এখন তো ডায়েট চার্ট মেনে চলতে হয়। তবে আরো দুটো পছন্দের খাবার আমার আছে। ফুচকা ও খিচুড়ি?

ফুচকা আপনার পছন্দ?

-হ্যাঁ। কেন নয়?

আচ্ছা, একসময় মেয়েদের একটা ম্যাগাজিন সম্পাদনারও তো অফার ছিল আপনার?

-হ্যাঁ, তা ছিল।

করলেন না কেন?

-মন থেকে সায় মেলেনি।

আত্মজীবনীও তো লিখলেন না। গোপালকৃষ্ণ রায় আপনাকে কাগজ-কলম এনে দিয়েছিলেন।

-তাও জানো দেখছি! একদমই ইচ্ছে করেনি। অনেক অপ্রিয় কথা লিখতে হতো।

লিখলে অন্তত এই ইন্ডাস্ট্রির অনেকের মুখোশ খুলে যেত। আপনার ভাষায় যারা বাস্টার্ড।

-কী হবে বলো। থাক না!

গেছে যে দিন, সে দিনকে একেবারে তাড়িয়ে দিতে হবে? কী সমস্যা স্মৃতিটুকু থাকলে?

-আমার যে ইন্টারেস্ট নেই। পিছুটানে কী প্রয়োজন?

এবার একদম অন্য একটা প্রশ্ন। রবীন্দ্রনাথ আপনার ভীষণ প্রিয়। তাঁর অনেক গান আপনার মুখস্থ। বিশেষত ‘হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে হেমন্তিকা…’

তাঁকে দেখেছেন কখনো?

-হ্যাঁ, দেখেছি তো। তখন তিনি অশক্ত। অসুস্থ। জাপানি ঘরে শুয়ে আছেন। ঋষির মতো। সৌম্যকান্তি। হাতজোড় করে প্রণাম করেছিলুম। এরপর তাঁকে যেদিন কলকাতায় নিয়ে আসা হলো, সেদিনটার কথা মনে পড়ে। ১৯৪১ সালের ২৫ জুলাই। স্ট্রেচারে করে নীল একটা বাসে তোলা হলো। সেদিনও আমি প্রণাম করেছিলুম।

তখন আপনি কত…?

-দশ হবো। সেদিন চারপাশে ছিল অদ্ভুত নীরবতা। আর ফেরেননি কবি তাঁর শান্তিনিকেতনে।

আপনার ছোটবেলাতেই ঘুরতে ইচ্ছে করছে। পাবনার কথা মনে পড়ে না? আপনার স্মৃতির শহর। সেই পদ্মা, সেই ইছামতী। গার্লস স্কুল। পলিটেকনিক কলেজ। পূজা। অনুষ্ঠান। উৎসব। পুতুলের বিয়ে। আপনার বন্ধু মঞ্জুশ্রী চাকী, আপনার পুতুল মেয়ের শাশুড়ি। পরে তিনিও প্রথিতযশা হয়েছেন। অন্য বন্ধুরা। ফুলরানী, রেখা, বাসন্তী, কণা, রেবা, শিপ্রা, মলয়া, প্রতিভা…

-স্মৃতি উসকে দিও না। মেদুর হয়ে পড়ি।

বিয়ের পর একবারই তো গিয়েছেন পাবনায়। সেখানে আপনাদের সেই বাড়িটা এখনো আছে। আপনার দু-একজন বন্ধুও।

-হবে হয়তো।

আর কখনো যেতে ইচ্ছে করেনি?

-মনে মনে তো আমি সব সময়ই যাই। প্রতি মুহূর্তেই যেতে পারি। কিন্তু এ আনাগোনা তো সেই থমকে থাকা সময়ে। আজকে যে নয়।

ওখানেও তো আপনি এক সাংঘাতিক দুঃসাহস দেখিয়ে এসেছেন!

-কী আবার করলুম?

সেই যে বিয়ের দিন ঘোমটা খুলে সরাসরি বরের দিকে তাকানো। প্রথা ভেঙে। দুঃসাহস নয়?

-আমি এমনই।

সিনেমাতেও তো একই কাণ্ড করেছেন। সাড়ে চুয়াত্তর ছবিতে?

-হ্যাঁ।

এতটা অকুতোভয় কীভাবে হতে পেরেছেন?

-জানি না। তবে ভেতরে একটা শক্তির অনুভব ছিল। সব সময়ই।

আপনার সুন্দর, প্রকৃতিঘেরা বাড়িটা যে এই অট্টালিকা হলো। মন খারাপ হয়নি?

(উত্তর মেলেনি। নিশ্চুপ থেকেছেন। নীরবতায় অনেক কিছুই বলা হলো হয়তো)

কখনো মনে হয়েছে, দিনগুলো আপনার সোনার খাঁচায় থাকল না?

-কারই বা থাকে বলো? তাই তো ঈশ্বরে সমর্পিত আমি। ‘মা গৃধঃ’। লোভের বিসর্জন। এটাই আমার জীবনদর্শন। তাতে নির্ভার থাকা যায়।

এটা বলার সময় অদ্ভুত পরিতৃপ্তির প্রশান্তি দ্যুতি ছড়ায় তাঁর চোখেমুখে।

এরপর আর কথা থাকে না। অন্য কোনো জিজ্ঞাসারও উচ্চারণেচ্ছা জাগে না।

উঠে আসি প্রণাম জানিয়ে। ঘিরে থাকে পূর্ণতার অনির্বচনীয় পরিতৃপ্তি। হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি স্টপে। ফেরার পথ ধরি।

কল্পনার ভিত্তিসূত্র

সুচিত্রার কথা : গোপালকৃষ্ণ রায়

অন্য এক সুচিত্রা : গোপালকৃষ্ণ রায়

অচেনা সুচিত্রা : চণ্ডী মুখোপাধ্যায়

সুচিত্রা সেন : উত্তরণ ও অন্তরাল : রঞ্জন বন্দোপাধ্যায়

সুচিত্রা : সম্পাদনা সরুপ দত্ত ও সুশান্ত বিশ্বাস

সবার উপরে : সংকলন ও সম্পাদনা আশিসতরু মুখোপাধ্যায় ও গৌতম বাগচি

বেডসাইড সুচিত্রা : সম্পাদনা বীজেশ সাহা ও চণ্ডী মুখোপাধ্যায়

টালিউডের গ্রেটা গার্বো সুচিত্রা সেন : হিমাংশু চট্টোপাধ্যায়

আনন্দলোক ও অন্যান্য পত্রপত্রিকা

লসঅ্যাঞ্জেলেসে দেওয়া রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা
 

লেখক : সাংবাদিক, এটিএন নিউজ এবং লাইফস্টাইল প্রফেশনাল

sksaifurrahman@gmail.com

 

(আজ ১৭ জানুয়ারি ২০১৬। ঠিক দুই বছর আগে মহাকালের অতিথি হয়ে যান বাংলা ছায়াছবির অবিসংবাদিত মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। সে বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে ক্যানভাস পত্রিকার মার্চ সংখ্যায় এই কাল্পনিক সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়।)

পাঠকের পছন্দ

গরমে ঘামাচিতে জেরবার?

ভ্রমণের সময় যা মনে রাখবেন

কীভাবে হবেন ভালো সহকর্মী?

সর্বাধিক পঠিত
  1. মুখের বিমা করলেন করণ জোহর?
  2. আদিত্যের সঙ্গে প্রেমে শিক্ষা হয়েছে, কোন ভুলটা আর করতে চান না অনন্যা?
  3. ‘ধুম ৪’ সিনেমায় খলনায়ক রণবীর, পরিচালক আয়ন মুখার্জি
  4. যে সিনেমায় অভিনয় করতে টাকা নেননি অমিতাভ
  5. মা হলেন ‘হীরামন্ডি’ খ্যাত অভিনেত্রী শারমিন সেগাল
  6. রহস্য নিয়ে আসছে অজয়ের ‘দৃশ্যম ৩’, মুক্তির তারিখ ঘোষণা
সর্বাধিক পঠিত

মুখের বিমা করলেন করণ জোহর?

আদিত্যের সঙ্গে প্রেমে শিক্ষা হয়েছে, কোন ভুলটা আর করতে চান না অনন্যা?

‘ধুম ৪’ সিনেমায় খলনায়ক রণবীর, পরিচালক আয়ন মুখার্জি

যে সিনেমায় অভিনয় করতে টাকা নেননি অমিতাভ

মা হলেন ‘হীরামন্ডি’ খ্যাত অভিনেত্রী শারমিন সেগাল

ভিডিও
এ লগন গান শোনাবার : পর্ব ২০৫
এ লগন গান শোনাবার : পর্ব ২০৫
পবিত্র হজ্ব ২০২৫ (সরাসরি)
পবিত্র হজ্ব ২০২৫ (সরাসরি)
জোনাকির আলো : পর্ব ১২৪
কনকা সেরা পরিবার, সিজন ০৩, গ্র্যান্ড ফিনালে
কনকা সেরা পরিবার, সিজন ০৩, গ্র্যান্ড ফিনালে
নাটক : কোটিপতি
নাটক : কোটিপতি
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
এক্সপার্ট টুডেস কিচেন : পর্ব ৩০১
এক্সপার্ট টুডেস কিচেন : পর্ব ৩০১
গানের বাজার, পর্ব ২৩৫
গানের বাজার, পর্ব ২৩৫
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৫২
ফাউল জামাই : পর্ব ৯৯
ফাউল জামাই : পর্ব ৯৯

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Browse by Category

  • About NTV
  • Career
  • NTV Programmes
  • Advertisement
  • Web Mail
  • NTV FTP
  • Satellite Downlink
  • Europe Subscription
  • USA Subscription
  • Privacy Policy
  • Terms & Conditions
  • Contact
  • Archive

NTV Prime Android App

Find out more about our NTV: Latest Bangla News, Infotainment, Online & Live TV

Qries

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited. All rights reserved

x